কাশ্মীরে হামলা, পুরুষরাই ছিল টার্গেট

দায় নিল আরটিএফ, প্রাণ গেল নৌ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার

| বৃহস্পতিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকদের ওপর গুলি চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা নারীপুরুষ আলাদা করে বিশেষ করে পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি চালাচ্ছিল। মঙ্গলবার পহেলগামের কাছে বৈসারণ এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া পর্যটকেরা। স্থানীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক নারী জানান, তার স্বামী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, আক্রমণকারীরা স্পষ্টভাবে পুরুষদের টার্গেট করছিল। তারা নারীদের ছেড়ে দিচ্ছিল। খবর বিডিনিউজের।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হঠাৎ করে কয়েকজন বন্দুকধারী নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে এবং গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। কখনও একজন একজন করে, আবার কখনও একসঙ্গে ঝড়ের মতো গুলি চালাচ্ছিল তারা। নারীদের দিকে লক্ষ্য করেনি, পুরুষদেরই নিশানা করছিল।

এই নির্মম হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, হামলাকারীদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি সৌদি আরব সফরে থাকলেও, এই হামলার খবর পেয়ে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। ফোনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে কথা বলেন তিনি।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সংঘটিত অন্যতম ভয়াবহ হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য, কাশ্মীর অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল হলেও, সাধারণত পর্যটকদের উপর এ ধরনের হামলা বিরল ঘটনা।

দায় নিল আরটিএফ : পহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর এক তরুণ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) এক কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (আরটিএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

হরিয়ানার কর্নালের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল সদ্য বিবাহিত ছিলেন। কোচিতে কর্মরত এই নৌবাহিনী কর্মকর্তা সম্প্রতি ছুটিতে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল তার বিয়ে হয়। নবদম্পতির জন্য এই সফর ছিল এক ছোট্ট আনন্দভ্রমণ।

এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা আইবির সদস্য মানীশ রঞ্জন। বিহারের বাসিন্দা মানীশ হায়দরাবাদের আইবি দপ্তরে মন্ত্রিসভা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সূত্র মতে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসারণে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্করতৈয়বার একটি শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (আরটিএফ) দায় স্বীকার করেছে। এর আগে সামাজিক মাধ্যমে আরটিএফের একটি বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ে। বিবৃতি দাবি করা হয়, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজারের বেশি বসবাসের অধিকার (ডোমিসাইল) দেওয়া হয়েছে কাশ্মীরের বাইরের বাসিন্দাদের। এভাবে জনসংখ্যার কাঠামো বদলানোর চেষ্টা চলছে। এরা পর্যটক সেজে আসে, ডোমিসাইল সংগ্রহ করে এবং পরে নিজেরা অঞ্চলের মালিকের মতো আচরণ শুরু করে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে গঠিত আরটিএফকে কাশ্মীরে স্থানীদের দিয়ে সশস্ত্র আন্দোলন চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল বলে ভারতীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সংগঠনের সর্বোচ্চ কমান্ডার ছিলেন শেখ সাজ্জাদ গুল এবং অপারেশনাল প্রধান হিসেবে ছিলেন বাসিত আহমেদ দার। আরটিএফ মূলত হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্করতৈয়বার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। শেখ সাজ্জাদ গুল, যিনি ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন, ২০২২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষিত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দেহভাজন তিনজনের স্কেচ প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালী অগ্নিকাণ্ডে ৪টি বসতঘর পুড়ে ছাই