দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
আজ শনিবার রাত ১০টার দিকে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্প্রিল ওয়ে বা জলকপাট খুলে দেয়ার কথা দুপুরে জানানো হলেও পরে রাতে জানানো হয়েছে রোববার (কাল) সকাল ৮টার দিকে পানি ছাড়া হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাত ১০টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ছিল বরাবর ১০৮ এমএসএল।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, এখনো পানি ছাড়া হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। রোববার সকাল আটটার দিকে পানি ছাড়া হবে। রাতে পানি ছাড়লে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারেন। আমরা যে পরিমাণ পানি ছাড়ার কথা বলেছি প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক; সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলেই প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। যা ৯ হাজার কিউসেকের তিনগুনেরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিবছরই পানি ছাড়া হচ্ছে। গত বছরও দুইবার পানি ছাড়া হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতেও পানি ছাড়া হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েকবছরে হ্রদে পানি কম থাকার কারণে পানি ছাড়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তিনি পানি ছাড়া নিয়ে স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে রাতে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এবং কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাতে ছাড়ার কথা জানানো হলেও পানি ছাড়া হয়নি। রোববার সকালে পানি ছাড়া হবে না। জোয়ারের মধ্যে পানি ছাড়লে চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় পানি বেড়ে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারেন। সেজন্য রাতে পানি ছাড়া হয়নি।
এর আগে, আজ শনিবার বেলা ৩টায় এক জরুরি বার্তায় জানানো হয়, রাত ১০টা থেকে স্প্রিল ওয়ের ১৬টি গেট ৬ ইঞ্চি করে উঠিয়ে দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হবে কর্ণফুলী নদীতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২৪ আগস্ট প্রথম দফায় কাপ্তাই হ্রদের পানি নিষ্কাশন ছাড়াও বিগত বছরগুলোতে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ২০১৭ ও ২০২৩ সালে দুই দফায় পানি ছেড়ে দেওয়া হয় কর্ণফুলী নদীতে।
এছাড়া ২০১৯ সালে ছাড়া হয় একবার। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই প্রথম ধাপে কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি স্প্রীলওয়ে অর্থাৎ স্বয়ংস্ক্রিয় জলকপাট দিয়ে পানি নিঃসরণের পর দ্বিতীয় দফায় আবারও ১৮ আগস্ট পানি ছাড়া হয়েছিল।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই ছাড়া হয় কাপ্তাই হ্রদের পানি। গত বছরের (২০২৩) ১৫ সেপ্টেম্বর ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দফায় কাপ্তাই হ্রদের পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে ৩২ হাজার কিউসেক পানি প্রতি সেকেন্ডে কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ দেয়া অংশে ১২ দশমিক ২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের ১৬টি জলকপাট বা স্লুইসগেইট রয়েছে।
এগুলো দিয়ে একসঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নির্গমন করতে পারে। হ্র্রদে ১০৯ এমএসএলের অধিক পানি পূর্ণ হলে জলকপাট দিয়ে পানি নির্গমণ করা হয়।