কাল আজকাল

কামরুল হাসান বাদল | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ব্যর্থ ফেরাউন, সফল আমলা
এবং মেধাবী সন্তানেরা

দেশটি স্বাধীন হওয়ার পেছনে যতগুলো কারণ ছিল তার মধ্যে আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার স্বপ্ন বা প্রতিশ্রুতিও ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রে জনগণের সার্বভৌমত্ব চেয়েছিলেন । তাই সংবিধানে উৎকীর্ণ করেছিলেন।
‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। [সংবিধানের প্রথম ভাগ, সংবিধানের প্রাধান্য- ৭ এর (১)]
(২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সে আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’
সরকারের তিনটি বিভাগ, আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ। আইন বিভাগের কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। জাতীয় সংসদ সদস্যগণ আইনসভার সভ্য। সংসদে তাঁরা আইন প্রণয়ন ও তা পাশ করবেন। বিচারবিভাগ সে আইনের ধারা অনুসরণ করে বিচারকাজ পরিচালনা করবে। আর শাসনবিভাগের কাজ হলো আইন অনুযায়ী সরকারি আদেশ যা আদতে আইনসভা ও বিচারবিভাগ দ্বারা অনুমোদিত তা প্রতিপালন করা। সরকারের প্রশাসনিক কাজ যারা করেন মূলত তাদেরকেই আমলা হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রশাসনিক কাজের প্রধান কার্যালয় সচিবালয় থেকে সচিবের মাধ্যমে উপজেলা পর্যন্ত আমলাতন্ত্রের স্তরবিন্যাস। আসলে সরকারি কাজ পরিচালিত হয় মূলত এই আমলাদের মাধ্যমে। এরা শক্তিশালী হয়ে উঠলে সরকার যেকোনো সময় বেকায়দায় পড়তে পারে কারণ একটি সরকারকে সফল কিংবা বিফল করার অনেক কিছু আমলাদের ওপর নির্ভর করে।
সমপ্রতি এমন একটি ঘটনায় আমলাদের নিয়োগদান নিয়ে জন অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৫ মে অবসর-উত্তর ছুটিতে থাকা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনে তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই কোষাধ্যক্ষ পদে অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়োগের নিন্দা জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চারটি সংগঠন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওই নিয়োগ বাতিল করে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ বিবৃতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক আমলার নিয়োগ বাতিল ও এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবি জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় পদে সাবেক অতিরিক্ত সচিব নিয়োগ করা প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে যায়। রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রেও আমলাদের পদায়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের বিভিন্ন পেশার কর্মক্ষেত্র ও পরিধি সুনির্ধারিত। ভিন্ন পেশার একজন ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে পেশাগত আন্তঃসম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্র ও প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টির হতে পারে।’
উল্লেখ্য, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সচিব বা আমলাদের নিয়োগদান পুরোনো হয়ে উঠলেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমলা নিয়োগ এবারই প্রথম। এরপর বর্তমান সরকারের আমলানির্ভরতা নিয়ে আবার আলোচনার টেবিল সরগরম হচ্ছে।
এরমধ্যে সাবেক আমলা এবং বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের একটি মন্তব্য আলোচনাকে আরও উস্কে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমলাতন্ত্র আমাদের মধ্যে আছে, থাকবে। ফেরাউনও আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেনি’। আমিও ছোট-খাটো আমলা ছিলাম, এখন আমি বড় আমলা। ফেরাউনকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। ফেরাউন মানে অনেক বড় রাজা। আরবের অনেক দেশে ফেরাউনের নামে নাম রাখা হয়।’
৮ জুন শেরে বাংলা নগরে একনেক সভায় সাভারে বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রকল্পের অনুমোদনের সময় এ কথা বলেন তিনি। একনেকের সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত নির্বাচনের পর থেকে সরকার অধিক আমলানির্ভর হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। দলের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভও বিরাজ করছিল। বিশেষ করে কোভিড মোকাবেলায় সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তে এমপি-মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের যুক্ত না করায় অনেকের মধ্যে হতাশাও বিরাজ করছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে জাতীয় সংসদে।
রাজনীতিবিদদের ‘গুরুত্ব না দিয়ে’ সরকারের বিভিন্ন কাজে ‘আমলানির্ভরতার’ উদাহরণ টেনে সংসদে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ। আর এ প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদের সুরেই গলা মিলিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যারা এই জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নেই, যিনি এই করোনাকালীন সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। কিন্তু, মানুষ মনে করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই এসব দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব, কাজ, সেটি আজ ম্লান হয়ে যায়।’ এসময় সরকারি আমলাদের নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। এসব কথা-বার্তা মানুষ পছন্দ করে না।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী এমপিরা সেক্রেটারিদের ওপরে। এই জিনিসটা খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও থাকবে, কিন্তু রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে নয়।’
সেদিন সংসদে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে একই সুরে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই। তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন। দেশ রাজনীতিশূন্য। কোথাও রাজনীতি নেই। প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাহেব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না। এটা তোফায়েল আহমেদ সাহেব যথার্থ বলেছেন।’
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎশেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদরা’। ব্যবসায়ীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকে না মন্তব্য করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বাতাস যেদিকে, তারা (ব্যবসায়ীরা) সেদিকে ছাতা ধরে। ক্ষমতায় আমরাও ছিলাম, তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’
রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ঝানু পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ এমনকি একসময় ছাত্রলীগনেতা পরে জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশিদদের কথা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আজ আমলা ও পুলিশবিভাগের অনেকেই বলেন, শুধু বলেন না বিশ্বাসই করেন যে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছেন তারা। এ অভিযোগ আমার নয়, খোদ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই হরহামেশা এই অভিযোগ তুলছেন। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হতাশার শেষ নেই।
এটি দলের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মতো সাধারণ মানুষের দলটি যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পুলিশ ও আমলানির্ভর হয়ে পড়ে তবে তা হবে চরম দুঃখজনক। দেশের গণতন্ত্রের জন্য তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তাছাড়া তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। কারণ জাতির পিতা সাধারণ মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই জীবন দিয়েছেন।
বলেছিলাম শেখ হাসিনা বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বুঝেশুনেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলীয় কোন্দল, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা, অযোগ্যতা ইত্যাদি কারণে তিনি দলের অনেকের ওপর নাখোশ। যে কারণে কোভিড মোকাবেলায় তিনি দলের মানুষের চেয়ে প্রশাসনের বা সরকারি লোকদের ওপর ভরসা করেছেন বেশি। এটি ঠিক যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেককে চেনা যায় না। দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যা হয় অনেক আগাছা-পরগাছা এসে ভিড়ে যায়। দলের মধ্যে থেকে দলকে ঘুণপোকার মতো কেটে ঝাঁঝরা করে দেয়। দলের নাম-পদবী ব্যবহার করে লুটপাটে মেতে থাকে। এরা দলের বোঝা। প্রবীণ, ত্যাগী, সৎ, নিবেদিত নেতা-কর্মীরা এদের গুতায় দল ছেড়ে পালাবার পথ পায় না। কিন্তু মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার তো কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু রাগ-ক্ষোভে ও আক্ষেপে বলেছিলেন, “আমি যা ভিক্ষা করে আনি সব চাটার গোষ্ঠী খেয়ে ফেলে,আমার গরীব কিছুই পায় না। আপনারা কাজ করেন, ঘুষ খাওয়া বন্ধ করেন।”
ভাবতে হবে দুর্নীতি অনিয়ম শুধু রাজনীতিবিদরা করে না। বরং রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করে যা আয় করে তার বিশাল একটি অংশ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্য ব্যয় করে। কারা দুর্নীতি বেশি করে তা প্রমাণের জন্য বিদেশের বেগমপাড়া আর দেশের অভিজাত আবাসিক এলাকার বাড়ি আর অত্যাধুনিক শপিংমলের মালিকদের বিষয়ে খোঁজ নিলে হয়ে যাবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মানুষ এতো অর্থের জন্য পাগল হয়েছে কেন? শুধু টাকা কামাই করবে কী করে, এই চেষ্টা। একদিন হাসতে হাসতে বললাম যে, বাংলার কৃষক, বাংলার দুঃখী মানুষ এরা কিন্তু অসৎ নয়। ব্ল্যাকমার্কেটিং করে কারা? রাগ করবেন না। আপনারা শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী সমপ্রদায় আছেন, আপনারা রাগ করবেন না। ব্ল্যাকমার্কেটিং কারা করে? যাদের পেটের মধ্যে দুই কলম বিদ্যা হয়েছে তারাই ব্ল্যাকমার্কেটিং করে। স্মাগলিং কারা করে? যারা বেশি লেখা-পড়া করছে তারা বেশি করে। হাইজ্যাকিং কারা করে? যারা বেশি লেখা-পড়া শিখছে তারাই করে। ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলিং তারাই করে। বিদেশে টাকা রাখে তারাই। আমরা যারা শিক্ষিত, আমরা যারা বুদ্ধিমান ওষুধের মধ্যে ভেজাল দিয়ে বিষাক্ত করে মানুষকে খাওয়াই তারাই। নিশ্চয়ই গ্রামের লোক এসব পারে না। নিশ্চয় আমার কৃষক ভাইরা পারে না। নিশ্চয় আমার শ্রমিক ভাইরা পারে না। পেটের মধ্যে যাদের বুদ্ধি বেশি আছে তারাই ব্ল্যাক-মার্কেটিয়ার। আর বিদেশি এজেন্ট কারা হয়। নিশ্চয়ই আমার কৃষক নয়, নিশ্চয়ই আমার শ্রমিক নয়। আমরা যারা লেখা-পড়া শিখি, গাড়িতে চড়ি, বিদেশে যেতে পারি, বিদেশীদের সাথে মিশতে পারি, ভাল স্যুট পরতে পারি তারাই বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে বিদেশের এজেন্ট হই।’
আমরা জানি অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অজ্ঞানপ্রসূত বা অহেতুক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। নির্বাচনের আগেপরে আমলাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা তিনি ভেবেচিন্তে নিয়েছিলেন। এটার সুফল তিনি পেয়েছেনও। কিন্তু সরকারের ওপর আমলাদের প্রভাব বা সরকারের বেশি বেশি আমলানির্ভরতা আখেরে ভালো ফল দেবে না। এতে জনমনে একটি ভুল বার্তা যাবে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। দল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ একজন রাজনীতিবিদ যতই খারাপ হোক তাকে শেষ পর্যন্ত জনগণের কাছেই যেতে হয়, জবাবদিহি করতে হয়। বেপরোয়া আমলারা সরকারের কাছেও জবাবদিহি করে না, জনগণের কাছে তো প্রশ্নই ওঠে না।
বিসিএস পাস করলেই যে কেউ সবজান্তা হয়ে যাবেন এ ধারণা ঠিক নয়। কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মুখস্থ করে পরীক্ষার টেবিলে উগড়ে দেওয়া আর প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল-মননশীল হওয়া এক কথা নয়। প্রশাসন চালানো আর বিশ্ববিদ্যালয় চালানো এক কথা নয়। বিসিএস ক্যাডার হলেই যে টেলিভিশন, রেডিও বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ভালো চালাতে পারবে তা কিন্তু নয়।
আজ বঙ্গবন্ধুর ভাষাতেই বলি এ দেশের জনগণের টাকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীরাই দুর্নীতিতে জড়িত বেশি, যাদের আমরা মেধাবী সন্তান বলে মাথায় তুলে রাখি।
বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি। সে বঙ্গবন্ধু তো রাজনীতিরই ফসল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি সে তো রাজনীতিরই ফসল। আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনাও রাজনীতিরই ফসল। কাজেই বিরাজনীতিকরণের যেকোনো পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে হবে আমাদের, কারণ সিদ্ধান্তটি হবে আত্মঘাতী।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রফেসর মোহাম্মদ আলীরা বারবার জন্মান না
পরবর্তী নিবন্ধহেরেও গর্বিত স্পেন কোচ লুইস এনরিকে