কাল আজকাল

কামরুল হাসান বাদল | বৃহস্পতিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া উপায় নেই
কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ দখল নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন করেছে আজাদী। ছবিতে গাড়ির স্ট্যান্ড দেখে কেউ আন্দাজই করতে পারবেন না এটা কর্ণফুলীর প্রায় মাঝামাঝি অংশের ছবি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদারদের নতুন নতুন কৌশলে চলছে সরকারি খাস জমি দখল। চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। নতুন ব্রিজ এলাকায় সরকারি জমি দখল করে কেউ বসিয়েছেন ট্রাক কিংবা বাস স্ট্যান্ড। আবার কেউ নতুন করে বসিয়েছেন নৌ-পারাপারের ঘাট। এতে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি নতুন করে দখলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণ খ্যাত কর্ণফুলী।’
সবারই মনে থাকার কথা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে এসব সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ২০১০ সালে একটি রিট দাখিল করেন। দফায় দফায় শুনানী শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, হাইকোর্টের সেই আদেশ এখনও বাস্তবায়ন তো হয়-ইনি, বরং দিন দিন গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা।
হাইকোর্টের সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করার বিষয়টি রিটকারী আইনজীবী আদালতের নজরে আনলে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা প্রশাসন, পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিডিএ চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই রুলের সপ্তাহ তিনেক পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন উক্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সে বছরের ২৮ জুলাই নোটিশ জারি করেন। এরপর ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মহাসমারোহে নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। মাঝখানে বিরতি দিয়ে ২৭ আগস্ট নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওইদিন মাঝিরঘাট এলাকায় ১০ একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়।
এরমধ্যে কর্ণফুলী নদীর তীরে নতুন করে খাস জমি দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নগর প্রান্তে নতুন ব্রিজের পশ্চিম পাশে সরকারি খাস জমিতে স্ট্যান্ড বানিয়ে বাস, ট্রাক দাঁড় করানো হচ্ছে। এসব মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নাম দিয়ে ট্রাকের কাছ থেকে চাঁদাও আদায় করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিককের কাছে। দখল ও অনিয়ম প্রক্রিয়া এখনো থেমে নেই। নতুন ব্রিজের নিচে নতুন করে অবৈধ ঘাট বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, নগরপ্রান্তে কর্ণফুলী নদীর ঘাটগুলো সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করে আসছে। কিন্তু নতুন ব্রিজের নিচে বসানো ঘাটটি অবৈধ হওয়ায় এই ঘাট থেকে কোন রাজস্ব পায় না সিটি কর্পোরেশন।
দখল-দূষণের শেষ নেই কর্ণফুলীতে। এর পাড়ে অবৈধ একটি ইটভাটাও আছে। আট বছরেও উচ্ছেদ হয়নি ইটভাটাটি। যদিও বিধি মোতাবেক সিটি কর্পোরেশন এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম নেই। তবে অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তোলা ইটভাটাটি উচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকাও নেই প্রশাসনের। শাহ আমানত সেতু লাগোয়া ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এটিকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তুলছে অনেকে।
এই ইটভাটা গড়ে ওঠার পেছনে চমকপ্রদ ইতিহাসও আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন’ প্রকল্পের কাজ পায় আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং কর্পোরেশন। প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস নামের স্থানীয় এজেন্ট ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট ড্রেজিং কাজের পাশাপাশি কর্ণফুলীর পাড়ে গড়ে তোলে এই ইটভাটা।
২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ আলমগীর এবং উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আখন্দ ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে দেখতে পান ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে কর্ণফুলীর তলদেশ থেকে তুলে আনা মাটি ব্যবহার করে পাশের ইটভাটায় ইট নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের টিমটি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ আলমগীর কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর সন্নিকটে ইটভাটা স্থাপন করে পরিবেশ দূষণ, নাব্যতা বিঘ্‌ন এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে কর্ণফুলী নদী দূষণের অপরাধে প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিসকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেন। একই সাথে প্রচলিত আইন অমান্য করে সিটি কর্পোরেশনের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে কিছুদিন ইটভাটার কার্যক্রম চালালেও পরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড ব্যাংক প্রটেকশন প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
২০১২ সালে জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটাটি নির্মাণের জন্য কোনো লাইসেন্স দেওয়া না হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকার এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শুধুমাত্র পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। পরে ওই ছাড়পত্রটিও বাতিল করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর ইটভাটাটি উচ্ছেদে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। পরবর্তীতে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দেন উচ্চ আদালত। জেলা প্রশাসনের তৈরি করা অবৈধ দখলদারের ওই তালিকার একটি হচ্ছে কর্ণফুলী পাড়ের এই ইটভাটা।
এদিকে ইটভাটাটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে ২০১২ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তৎকালীন এক পরিচালকের বিরুদ্ধে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অতিরিক্ত সচিব অরূপ চৌধুরী অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। পরবর্তীতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ইটভাটাটির উচ্ছেদ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমানে ইটভাটাটি পরিত্যক্ত হিসেবে অব্যবহৃত পড়ে থাকলেও এটির চারপাশে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলেও তা আবার থমকে গেছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হলেও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা থাকছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও সামপ্রতিক সময়ে ‘বন্দরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে দায় সারছে জেলা প্রশাসন। সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটির (জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ) বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনে গড়িমসির অভিযোগও করেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে কর্ণফুলী দখল ও জরিপ প্রতিবেদন-২০২০ উপস্থাপন করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের সময় এডিবি মাস্টার প্ল্যান ও বিএস সিট অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬.১৬ মিটার। কিন্তু সামপ্রতিক চালানো জরিপে শাহ আমানত সেতুর নিচে বর্তমানে কর্ণফুলী নদী ভাটার সময় প্রস্থ মাত্র ৪১০ মিটারে নেমেছে। তাছাড়া কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তর অংশে ৪৭৬ মিটার নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে নদীর দক্ষিণ অংশে ব্যাপক স্রোতের সৃষ্টি হয়। স্রোতের এই তীব্রতার চাপ কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত ব্রিজের সংযোগ সড়কের বর্ধিত অংশের পিলারে পড়ছে। যা শাহ আমানত সেতুর জন্য বিপজ্জনক। এতে বন্যা বা সাইক্লোন হলে শাহ আমানত সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে , এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৮৯৮ মিটার, কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র ৪৬১ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৯৩৮ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আছে ৪৩৬ মিটার। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় কর্ণফুলীর প্রস্থ হওয়ার কথা ৯০৪ মিটার, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিটারে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়। তন্মধ্যে- অবিলম্বে কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক, সোনালী মৎস্য আড়ত, বেড়া মার্কেটসহ কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা। নিয়মিত ড্রেজিং করে ও প্রয়োজনীয় নদীশাসনের মাধ্যমে বাংলাবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকার নৌবন্দর ঝুঁকিমুক্ত করা। নদীর পাড় স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা এবং প্রস্তাবিত হাইড্রো মরফলোজিক্যাল মডেল স্টাডির মাধ্যমে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রবাহ ও নদীশাসনের কাজ সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা নেওয়া।
২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তুরাগ নদী নিয়ে রায় ঘোষণাকালে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,’কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ উঠলে তিনি এমপি নির্বাচন থেকে শুরু করে সকল নির্বাচনে অযোগ্য হবেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। নদী দখলের মতো অভিযোগ থাকলে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অযোগ্য হবেন ।
নদী রক্ষায় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নদী রক্ষার জন্য দেয়া রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ-সংক্রান্ত রায়ের কপি (অনুলিপি) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হাইকোর্ট বলেছেন, এ রায়ের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হোক। যাতে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল সম্পর্কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা (লিগ্যাল পারসন) ঘোষণা করে সে সময় হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব নির্দেশনাসহ বিভিন্ন ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদ-নদী-খালের আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করছেন হাইকোর্ট। দেশের সব নদ-নদী-খাল-জলাশয় ও সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা এবং তার বহুমুখী উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।
আদালত তার রায়ে নির্দেশনা দিয়ে নদী দখলকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠিন সাজা ও জরিমানা নির্ধারণ করে অভিযোগ দায়ের, তদন্তের ব্যবস্থা রেখে ২০১৩ সালের নদী রক্ষা আইন সংশোধন করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। পাশাপাশি নদী রক্ষা কমিশন আইনের যেসব সংশোধন প্রস্তাব করেছে, তা অনতিবিলম্বে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নদী রক্ষা কমিশনকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সবধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও নদী রক্ষায় প্রতিরোধমূলক নির্দেশনা হিসেবে আদালত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই মাসে একদিন এক ঘণ্টা করে নদী দূষণের ওপর সচেতনতামূলক ক্লাসের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কর্ণফুলী বা দেশের নদ-নদী, খাল-বিল-জলাশয় রক্ষায় অনেক কথা বলেছি, লিখেছি। হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর আর তো কিছু বলার থাকে না। এখন কর্ণফুলী রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছি না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিবা নিশি জপি
পরবর্তী নিবন্ধড. মঈনুল ইসলামের কলাম