দানাদার খাদ্য শস্যের ব্যবসার উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম শনাক্ত ও এর শাস্তি নির্ধারণ করে নতুন একটি আইনের খসড়া সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
খাদ্য বাজারজাত করার ধাপগুলোর মধ্যে নতুন চিহ্নিত অপরাধ হিসেবে খাবারের প্রকৃত নাম পরিবর্তন করে কোনো ‘কাল্পনিক নামের’ ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে আইনের খসড়ায়।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন–২০২৩’ শীর্ষক এ আইনের খসড়া অনুমোদন পায়। খাদ্য মন্ত্রণালয় নতুন এ আইন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। খবর বিডিনিউজের। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, ধান, চাল, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদি দানাদার খাদ্যশস্য সংক্রান্ত অপরাধ চিহ্নিত ও শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনটি করার প্রস্তাব করা হয়। এখানে অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা হয়েছে। আগে এ সংক্রান্ত দুটি আইন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যান্ড ১৯৫৬’ ও ‘ফুড গ্রেইন সাপ্লাই প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিটিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯’ শীর্ষক আইন দুটিকে মিলিয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে। এতে মোট ২০টি ধারা রয়েছে।
তিনি জানান, ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সচিব জানান, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্য শস্য হতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে উক্তরূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা এ আইন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একই ভাবে কোনো খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ করে বা পরিবর্তন করে এর উপাদান নষ্ট করে উৎপাদন বা বিপণন করা হলেও তা দণ্ডনীয় হবে। এছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন বা বিপণন করলে, খাদ্য অধিদপ্তরের ইস্যু করা লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চালানো হলে এবং অনুমোদিত সীমার অধিক পরিমাণে খাদ্য বিপণন করলে এই আইনের আওতায় অপরাধী হবেন বলে জানান তিনি। এসব অপরাধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে কোনো ব্যক্তি সময়ে সময়ে সরকারি কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অধিক পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড হতে পারে। আদালত অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।
খসড়া প্রস্তাবে কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন মজুদ বা স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন পর্যায়ে কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ বা বিতরণ করলে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান সচিব।
প্রস্তাবিত আইনে অর্থদণ্ডের পরিমাণটা বেশি বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে হাজার টাকা ছিল এখন সেখানে লাখ টাকা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।