চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেল–কাম–রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি নতুন করে পুনঃমূল্যায়ন হচ্ছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হলেও প্রকল্পটি একনেক অনুবিভাগ থেকে ভৌত অবকাঠামো বিভাগে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে আবারও যাচাই–বাছাই করতে। জানা গেছে, একান্ত প্রয়োজন না হলে নতুন বড় প্রকল্পের বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নিতে পারে সরকার। এছাড়া বৈদেশিক ঋণসহ এত বেশি ব্যয়ের প্রকল্প এ মুহূর্তে বর্তমান সরকার নাও নিতে পারে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবটি নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল আজাদীকে বলেন, আগে যে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে–নতুন সরকার আসার পর এগুলো আবার রিভিউ করা হচ্ছে। কালুরঘাট সেতু প্রকল্পটির ডিপিপি প্ল্যানিং কমিশন থেকে একনেকে গিয়েছিল। প্রকল্পটি একনেক অনুবিভাগ থেকে ভৌত অবকাঠামো বিভাগে ফেরত দেওয়া হয়েছে আরও যাচাই–বাছাই করার জন্য। যদি একনেকে যায় তখন দেখা যাবে; আর না হয় একটু বিলম্ব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুনঃমূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো– যেসব প্রকল্পে সুফল পাওয়া যাবে না, বা এই মুহূর্তে করা জরুরি নয়, সেগুলো বাদ দেওয়া। আবার কিছু প্রকল্পের অগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গও বাদ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, কালুরঘাটে বর্তমান রেল সেতুটি চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশেই কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল ও রোড সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় হয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করার কথা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। ‘বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোস দ্য রিভার কর্ণফুলী অ্যাট কালুরঘাট পয়েন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য গত ২৭ জুন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ মুহূর্তে এত বড় বাজেটের নতুন প্রকল্পের জনগুরুত্ব আছে কিনা পুনঃমূল্যায়ন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ শতবর্ষী এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে। রাজধানী ঢাকার সাথে পর্যটন নগরী কঙবাজারের রেল চলাচল করে এ সেতুর উপর দিয়ে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রেল যোগাযোগের জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে নগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কঙবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতুর উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণ সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কঙবাজারের পথে রেল চালুর জন্য কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য গত বছরের ১ অগাস্ট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে গত ১৩ মাস ধরে সংস্কার কাজ চলছে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুটি। মেরামত শেষে চলতি মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানান রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।