কালীপ্রসন্ন ঘোষ : লেখক ও সাংবাদিক

| রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

রায়বাহাদুর কালীপ্রসন্ন ঘোষ (১৮৪৩১৯১০)। লেখক ও সাংবাদিক। আমাদের শিশুপাঠ্য ‘পারিব না’ কবিতাটি সবার কাছে পরিচিত। সেই ‘পারিব না একথাটি বলিও না আর,/ কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার’ কবিতাটি পড়েনি এমন কেউ নেই। ১৮৪৩ সালের ২৩ জুলাই ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে ভরাকর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কালীপ্রসন্ন বিশ বছর বয়সে কলকাতার ভবানীপুরে খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে এক বক্তৃতা দিয়ে প্রথম জীবনেই বাগ্মিতার পরিচয় দেন এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীর প্রশংসা অর্জন করেন। কালীপ্রসন্ন ছিলেন পূর্ববঙ্গীয় ব্রাহ্মসমাজের একজন বিশিষ্ট সভ্য। তিনি ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা শুভসাধিনী সভার’ মুখপত্র শুভসাধিনী (১৮৭০) সম্পাদনার মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। ৪ বছর পর ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সম্পাদনা করেন সেকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা বান্ধব। বাইশ বছর বয়সে কালীপ্রসন্ন ঢাকার নিম্ন আদালতে পেশকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে দীর্ঘ পঁচিশ বছর তিনি ভাওয়াল এস্টেটের প্রধান দেওয়ান ছিলেন। এ সময় তিনি ‘সাহিত্যসমালোচনী সভা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন এবং তার মাধ্যমে সমকালীন সাহিত্যিকদের নানাভাবে সাহায্য করেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎএর সদস্য (১৮৯৪) এবং সহসভাপতির (১৮৯৭১৯০০) পদ অলঙ্কৃত করেন। এ ছাড়া তিনি সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সদস্য এবং সদর লোকাল বোর্ডের সভাপতি হিসেবেও গুরু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সমাজ ও দর্শন বিষয়ক অনেক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেন। প্রবন্ধগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রভাতচিন্তা (১৮৭৭), নিভৃতচিন্তা (১৮৮৩), নারীজাতিবিষয়ক প্রস্তাব (১৮৯৬) ও নিশীথচিন্তা (১৮৯৬)। আর তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হচ্ছে: ভ্রান্তিবিনোদ (১৮৮১), প্রমোদলহরী (১৮৯৫), ভক্তির জয় (১৮৯৫), মা না মহাশক্তি (১৯০৫), জানকীর অগ্নিপরীক্ষা (১৯০৫), ছায়াদর্শন (১৯০৫) প্রভৃতি। এ ছাড়া সঙ্গীতমঞ্জরী (১৮৭২) নামে একটি আধ্যাত্মিক সঙ্গীতসংগ্রহ এবং কোমল কবিতা (১৮৮৮) নামে একটি শিশুপাঠ্য গ্রন্থও তিনি রচনা করেন। কালীপ্রসন্নের রচনারীতি বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র এবং ইংরেজ পণ্ডিত কার্লাইলের দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত। তাঁর রচনাসমূহ ভাবগাম্ভীর্য, ইতিহাসচেতনা ও গভীর জীবনবোধেপূর্ণ। পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বঙ্গের বিবুধমহল কর্তৃক ‘বিদ্যাসাগর’ এবং ইংরেজ সরকার কর্তৃক ‘রায়বাহাদুর’ ও ‘সি.আই.ই’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১০ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদারিদ্র্যমুক্ত জীবন অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে