কার-মাইক্রোতে ঈদযাত্রা

আছে ট্রাক ও লরি, রাতে ম্যানেজ করে চলছে বাস

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ মে, ২০২১ at ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ

উপলক্ষ ঈদ। সাথে আছে নাড়ির টান। দু’য়ের সম্মিলনে ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে হৃদয়। তাই বিধি-নিষেধ কিছুই মানছেন না লোকজন। তারা ছুটছেন গ্রামে। ফলে ধীরে ধীরে ফাঁকা হচ্ছে শহর। সরব হয়ে ওঠছে গ্রাম। জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় উপজেলায় যেতে সমস্যা হচ্ছে না ঘরমুখোদের। তবে অন্য জেলার যাত্রীরা বাড়তি ভাড়ায় কার-মাইক্রোবাসে করেই শহর ছাড়ছেন। অবশ্য ঢাকা-কক্সবাজারসহ অন্য জেলার উদ্দেশে রাতের আঁধারে পুলিশকে ম্যানেজ করে বাস ছাড়ার অভিযোগ আছে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটি শুরু হবে আগামীকাল বুধবার থেকে। শনিবার পর্যন্ত টানা চারদিন বন্ধ থাকবে সরকারি অফিস-আদালত। ওই হিসেবে আজ মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবস। অবশ্য গতকালও শবে কদরের বন্ধ ছিল। তাই আজ অফিসে সবাই রিল্যাক্স মুডে থাকবেন। তুলনামূলক কম থাকবে কাজের চাপ। অনেকে আগে-ভাগে বেরিয়ে যাবেন। দ্রুত বাড়ি যেতে ধরবেন গাড়ি। অবশ্য যারা অন্য জেলায় যাবেন তাদের বেশিরভাগই আজও ছুটি কাটাচ্ছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছেন। এদিকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, লকডাউনের মধ্যেও চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচলে বাধা নেই। গত ৫ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল পূর্বের মতো বন্ধ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় সুযোগ থাকায় শহর থেকে উপজেলায় গণপরিবহন চলাচল করছে। নগরে বসবাসরত মীরসরাই, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, ফটিছড়িসহ দূরের উপজেলার লোকজনের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হচ্ছে না।
শহীদ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক সুবিধা এবং কর্মের কারণে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার কয়েক লাখ পরিবার শহরে বাস করে। এসব পরিবারের বেশিরভাগই ঈদ করেন গ্রামে। গতবার তারা ঈদ করতে যেতে পারেন নি। এবার তারা মিস করবেন না। এদের তিন ভাগের একভাগও যদি গ্রামে যায় তাহলে সত্যিকার অর্থেই শহর ফাঁকা হয়ে যাবে। এর সঙ্গে অন্যান্য জেলার বাড়ি যাওয়া লোকজনের সংখ্যা যোগ করলে এবার শহর ছেড়ে যাওয়া লোকের সংখ্যা কয়েক লাখ হয়ে যাবে।
এদিকে গতকাল বিকেলে সিটি গেট এলাকায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, ছুটে চলা মানুষের ভিড়। রাস্তায় রাস্তায় কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নানা বয়সের লোকজন। কেউ হাঁটছেন। যেন হেঁটেই বাড়ি যাওয়ার ব্রত নিয়েছেন। অবশ্য কোনো গাড়ি আসতে দেখলেই হাতের ইশারায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চালকের। গাড়ি থামতেই কার আগে কে ওঠবেন শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন তথা শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি তখন কেউ মানতেই চান না। এমনকি এক সিট খালি রেখে যাত্রী বসানোর বিষয়টিও ছিল উপেক্ষিত।
সিটি গেটে দেখা গেছে, দুই বছরের মেয়ে কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন শফিকুল ইসলাম। পাশে পাঁচ বছরে ছেলের হাত ধরে হাঁটছেন শফিকুলের স্ত্রী। জানালেন, আকবর শাহ এলাকায় বাসা। সেখান থেকে সিএনজি করে এসেছেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। সিটি গেট পার হলেই পরিচিত এক মাইক্রোবাস চালকের সাথে দেখা হবে। তার গাড়িতে করেই অন্য যাত্রীদের সাথে নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন। তিনি বললেন, গ্রামে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। তাদের কাছে যেতেই হবে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উত্তরে বললেন, সবই উপরওয়ালার ইচ্ছে।
আরেক পথচরী আনুমানিক ৪৫ বছরের সগির হোসেন জানান, তিনি কসবা যাবেন। যতক্ষণ গাড়ি পাবেন না ততক্ষণ হাঁটতে থাকবেন। কোনো একসময় গাড়ি পেয়ে যাবেন বলেও আশাবাদী তিনি। তার মতো আরো অনেককেই হেঁটে বাড়ির দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকার পরও চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে নানাভাবে বাড়ি ফিরছেন শত শত মানুষ। লকডাউন কার্যকর করতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না।
এদিকে বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রাক, লরিতে করেও অনেককে যেতে দেখা গেছে। চালকের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে নিচ্ছেন ভাড়া। এরপর চালকের পাশের সিটে বসেই ছুটছেন গন্তব্যে। এছাড়া ফেনী, কুমিল্লামুখী অনেককেই মীরসরাই পর্যন্ত যেসব গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলোতে চড়তে দেখা গেছে। তারা বলছেন, মিরসরাই থেকে সিএনজি করে ফেনী হয়ে নিজ গ্রামে পৌঁছে যাবেন।
এদিকে শাহ আমানত ব্রিজ থেকে কিছু বাস সরাসরি কঙবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এছাড়া শাহ আমানত ব্রিজ গোল চত্বর থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ বাস যাচ্ছে বাঁশখালী উপজেলা হয়ে কঙবাজার জেলার পেকুয়ার টৈটং পর্যন্ত। সেখান থেকে সিএনজিতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন লোকজন।
লকডাউনের কারণে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পর্যন্ত কোনো বাস ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। তবে অঙিজেন মোড় থেকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির উদ্দেশে মাইক্রোবাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। সেখানে প্রচুর মাইক্রোবাস দেখা গেছে। অনেকে আবার রাউজান পর্যন্ত যাচ্ছেন। সেখান থেকে সিএনজি বা অন্য কোনো যানে করে করে রাঙামাটি যাওয়ার কথা বললেন তারা। একইভাবে ফটিকছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি যাচ্ছেন অনেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধশেষ মুহূর্তে টুপি আতরের দোকানে ছুটছে মানুষ