চট্টগ্রাম বন্দরে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল ১১২ গাড়ির মধ্যে বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে মাত্র তিনটি। এই নিয়ে মোট ৫ বার নিলামে তোলা হয় এসব গাড়ি। চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘ সময় ধরে পড়া থাকার কারণে এসব গাড়ির অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও অকেজো হতে শুরু করেছে। কোটি কোটি টাকার মূল্যের এসব গাড়ির বেশিরভাগ উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
এই মূহূর্তে এসব অবিক্রিত গাড়ি নিয়ে বিপাকে আছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ৩ ও ৪ নভেম্বর অনলাইন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিলামে তোলা হয় কার্নেট গাড়ি। এতে মোট দরপত্র জমা পড়ে ৫৬১টি। এর মধ্যে মানুয়াল পদ্ধতিতে জমা পড়েছে ২৯০টি এবং অলনাইনে (ই–অকশন) দরপত্র জমা পড়েছে ২৭১টি। এবারের নিলামে সর্বোচ্চ দর উঠেছে জার্মানির তৈরি বিএমডব্লিউ গাড়ির। নিলামে ২০০৭ সালে তৈরি সিলভার কালারের গাড়িটির কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত মূল্য ধরেছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৬০ টাকা। ফারজানা ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান গাড়িটির দর হাঁকে ৫৩ লাখ টাকা। অপরদিকে বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ২০০৬ সালে তৈরি ছয় আসনে গাড়ির সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ২০০৬ সালে তৈরি ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডের গাড়ির এবার সর্বোচ্চ দর পড়েছে ২৮ লাখ টাকা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, নিলামের তালিকায় থাকা ১১২ গাড়ির মধ্যে ছিল–জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তৈরি বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুইজার, ল্যান্ড রোভার, জাগুয়ার, মিতসুবিশি, টয়োটা এবং লেক্সাস জিপের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। এর আগে গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বার নিলামে তুলেও প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় প্রতিবারই নিলাম বাতিল করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে নিলামের তালিকায় থাকা থাকা ৪৭ নম্বরের বিএমডব্লিউ, ৫৫ নম্বরের ল্যান্ড ক্রুইজার এবং ৮৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ার পারমিট (সিপি) পাওয়া সাপেক্ষে বিক্রয় অনুমোদন দেয়া হয়।
কাস্টমস সূত্রে আরো জানা গেছে, কার্নেট সুবিধায় আসা গাড়িগুলো প্রথম দফায় গত ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, তৃতীয়বার ২০১৮ সালের মে মাসে ১১১টি গাড়ি এবং গত ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো ২২টি গাড়ি তোলা হয়। তখন প্রতিবারই দামে অসামঞ্জস্য থাকায় দরদাতাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, কার্নেট গাড়িগুলো আইন ও বিধি মোতাবেক আমরা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে অনেকগুলো আমদানির সময় থেকে ৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিপি নেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। আমরা তো চাইলেই এসব গাড়ি সিপি নিলামে বিক্রি করতে পারি না। আগামী কার্নেট গাড়ির ইনভেন্ট্রির সময়ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবে। নিলাম কমিটিতে তাদের উপস্থিতিতে ইনভেন্ট্রি থেকে শুরু করে নিলাম কার্যক্রমের সব প্রক্রিয়া শেষ হবে। অবিক্রিত এসব গাড়ি এই মূহূর্তে কাস্টমস বন্দরের জন্য বোঝার মতো।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্নেট সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে যারা শুল্কমুক্ত এই সুবিধা ব্যবহার করে এসব গাড়ি এনেছেন তাদের বেশির ভাগই প্রবাসী বাংলাদেশী, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই এসব গাড়ি কার্নেট সুবিধায় এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব গাড়ি আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলে একসময় আমদানিকারকরা গাড়িগুলো খালাস করে নেননি।