কারো ওপর কোনো হামলা হবে না : ইউনূস

ছাত্রদের দেখানো পথেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

| শুক্রবার , ৯ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশের প্রত্যেককে রক্ষা করা এবং আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকেই প্রথম দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাওয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত থাকেন, দেশের কোনো জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না। এটা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। আর আমার কথা যদি না শোনেন, তাহলে আমার প্রয়োজন এখানে নাই; আমাকে বিদায় দেন। আমাকে প্রয়োজন মনে করলে আমার কথা শুনতে হবে। আমার প্রথম কথা হল, বিশৃঙ্খলা থেকে সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করা, যাতে আমাদের ছাত্ররা আমাদের যা যা পথ দেখায়, আমরা সেই পথে এগিয়ে যেতে পারি। খবর বিডিনিউজের।

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে দুবাই হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাত সোয়া ৯টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। বিমানবন্দরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাঘাত ঘটা এবং বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও আক্রমণের ঘটনা ষড়যন্ত্রেরই অংশ। যারা বিপথে গেছে, তাদেরকে পথে আনতে চাই। যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। আসার পথে শুনলাম, এখানে আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে, ঘরবাড়িসম্পদ জ্বালিয়ে দিচ্ছে, চুরিডাকাতি হচ্ছে। অফিস আদালতে আক্রমণ করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। এগুলো হল ষড়যন্ত্রের অংশ।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলপ্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন। আমাদের কাজ হল, প্রত্যেককে রক্ষা করা, একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বিশৃঙ্খলা, সহিংসতাএগুলো হল অগ্রগতির বড় শত্রু। আমাদের যে যাত্রা শুরু হল, সেই যাত্রার শত্রু।

আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সেই শত্রুদের যেন রোধ করা যায়, বুঝিয়ে শুনিয়ে হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে হোকতাকে বোঝাতে হবে। তাকে মেরেকেটে বোঝানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা আমাদের প্রথম কাজ।

দেশের মানুষের কাছে সরকার ধারণাই যে খুবই নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু মানুষের কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে, সরকার একটা দমননিপীড়নের একটা যন্ত্র; সে ভয়ের একটা জিনিস, তাকে সামাল দিয়ে চলাএটা সরকার হতে পারে না।

সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে যেসরকার মানুষকে সাহায্য করবে, তার পাশে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু সরকার তার পাশে দাঁড়ায় না। এখন যে সরকার হবে, সে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। মানুষের আস্থাভাজন হবে, সেই আস্থাটা আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে মানুষের মনে। তাহলে মানুষও এতে যোগ দিবে। বাংলাদেশকে একটি বড় পরিবার বর্ণনা করে এ পরিবারে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে, তা সরিয়ে ফেলতে চাই। বাংলাদেশ একটি অনেক সম্ভাবনার দেশ। আমরা সম্ভাবনা নষ্ট করে দিয়েছি; এখন আবার সেই বীজতলা তৈরি করতে হবে। তারা এই দেশটা তৈরি করবে, তাদের হাত দিয়েই হবে এবং তাদের দিকে আমরা তাকাব। তাদের নির্দেশ মত আমরা অগ্রসর হব। আমাদের মধ্যে যেন গোলযোগ না হয়। আমরা একযোগে একসাথে চলতে পারি এবং আমরা তড়িৎ গতিতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাবএটাই আমার কামনা। আপনাদের সবার কাছে আবেদন, উনাদেরকে আপনারা সে সুযোগ দিন, আমরা যেন সে পথে এগিয়ে যাই।

তরুণদের উদ্দেশে এই নোবেল বিজয়ী বলেন, তোমাদের মধ্যে যে সৃজনশীলতা রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা শুধু বইখাতাতে লেখার জিনিস না। এটা প্রকাশ করার জিনিস, স্থাপন করার জিনিস। এই তরুণ সমাজকে বুঝাতে হবে যে, এই দেশ তোমাদের হাতে। তোমরা এটাকে যেভাবে স্বাধীন করতে পেরেছো, তোমাদের মনের মত করে এটাকে গড়তেও পারবে। তোমাদের দেখে সবাই শিখবেকীভাবে একটা দেশ একটা তরুণ সমাজ পাল্টে ফেলতে পারে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা স্মরণ করতে গিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের গলা ধরে আসে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে; এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে কোনো যুবক, কোন যুবতীই আর হার মানেনি, সামনে এগিয়ে গেছে। এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মরতে রাজি আছি। যার কারণে সারা বাংলাদেশজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে; যার ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস বলেন, এই স্বাধীনতাটা রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা করা না, এই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছাতে হবে। নইলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম নেই। এই স্বাধীনতাকে (মানুষের ঘরে) পৌঁছানোই আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমাদের শপথ। মানুষ যেন জানেবাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হল, তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, সুযোগের পরিবর্তন, তার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন; এটা যেন প্রত্যেকে বুঝতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপদেষ্টা পরিষদে যারা, কার কী পরিচয়
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬