বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর ন্যাশনাল রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বিবিএসের তথ্য মতে, ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন জনসংখ্যার মধ্যে পল্লী অঞ্চলে বসবাস করেন ১১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৪ জন এবং শহরের বসবাস ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১০৭ জন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ জন ও নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ জন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও নারী ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ৫০ লাখ ৫৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে। সবচেয়ে কম মানুষ গেছেন রংপুর বিভাগের বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, জনসংখ্যাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রেখে বিদ্যমান সম্পদের পরিবেশবান্ধব ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জনসংখ্যাকে পরিণত করতে হবে জনসম্পদে। টেকসই উন্নয়নে পরিকল্পিত ও দক্ষ জনসংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, পরিকল্পিত ও পরিমিত জনসংখ্যা যেকোনো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের আয়তন, অবস্থান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় পরিকল্পিত পরিবার গঠনের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। জাতীয় উন্নয়নে নারীদের অধিক হারে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ছাড়া জেন্ডার সমতা অর্থাৎ নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারী–পুরুষ সমতা এবং নারী ও কন্যাশিশুর অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরসহ বিভিন্ন জনমিতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখনো একটি বড় সমস্যা। কেননা এখানকার জনঘনত্বের হার সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি আমাদের আর্থসামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বেকারত্ব; দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও অশিক্ষার শিকার হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। একটি দেশে জনসংখ্যা তখনই সম্পদে পরিণত হয়, যখন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়। কিন্তু এ চাহিদাগুলো পূরণে এখনো বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পনার অভাবে পুরো জনসংখ্যাকে কার্যকর জনসম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দেখা দিয়েছে বৈষম্য। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে এ ঘাটতিগুলো পূরণ করা অপরিহার্য।
তাঁরা বলেন, ‘জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে দেশের মানুষকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত এবং দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে। বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষায় জনগোষ্ঠীকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পৃথিবীর যে দেশ যত বেশি তার জনগণকে শিক্ষার সংস্পর্শে আনতে পেরেছে সে দেশ তত বেশি মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশের জন্য সম্পদ। কেননা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার, কর্তব্য, দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে। ফলে দেশের জনগণ শিক্ষিত হলে দেশ ও জাতির জন্য সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনবে। দেশের জনসংখ্যা অধিক হলেও সমস্যা নেই, যদি সে জনসংখ্যা দক্ষ হয় বা তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়। তাই আমাদের জনসংখ্যাকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে পারবো। বিনির্মাণ করতে পারবো কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলাদেশ’।