২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে প্রথম আরসার নাম শোনা গিয়েছিল। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আগে ইংরেজিতে ‘ফেইথ মুভমেন্ট’ নামে তাদের তৎপরতা চালাত। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ছিল ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ নামে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। ২০১৭ সালের আগস্টে চালানো হামলা ছিল মূলত বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার চেষ্টা। এই সংগঠনটি বলছে, তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার আদায়ে কাজ করে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। খবর বিবিসি বাংলার।
মিয়ানমার বলছে, এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা জিহাদীরা, যারা বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তবে সংগঠনটি কত বড়, এদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, তার কোনো পরিষ্কার ধারণা তাদের কাছেও নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতার অভিযোগ শোনা যায়। আইনশৃক্সখলা বাহিনী এবং দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসাসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং চরমপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ ক্রিয়াশীল রয়েছে, যারা মূলত অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতায় যুক্ত। বলা হয়, রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় এখন বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় আরসাকে।
আরাকানে যারা এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত তাদের আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে করা হয়। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সংগঠনটির প্রতি সমর্থন এবং সহানুভূতি আছে।
তবে এই আরসার বিরুদ্ধেও নানারকম সহিংসতা চালানোর অভিযোগ আছে। ২০১৮ সালে আরসার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসা রাখাইনে একটি অথবা দুটি গণহত্যা চালিয়ে শিশুসহ ৯৯ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে। আরসা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরএসও : রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও একটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী। ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের আরাকানে সরকারের বড় ধরনের অভিযানের পর গঠিত হয়েছিল। এই সংগঠনটি নিজেদেরকে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেও দাবি করে। মোহাম্মদ আইয়ুব খান নামে এক ব্যক্তি এই সংগঠনের প্রধান বলে জানা যায়।
পুলিশ বলছে, আরএসও মূলত সন্ত্রাসী সংগঠন। অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মতোই তারা রোহিঙ্গা শিবিরের আধিপত্য দখল নিতে কাজ করে।
এপিবিএন–৮ এর সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, এসব গোষ্ঠী বলে যে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করে। কিন্তু তারা কেউই এ ধরনের কোনো কাজ করে না। তারা সবাই সন্ত্রাসী সংগঠন।
তিনি বলেন, এখানে কয়েকটি সন্ত্রাসী সংঠন রয়েছে। আরসা, আরএসও, নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, আর কিছু আছে ডাকাত সংগঠন আছে। এরা সবাই অবৈধ। যারা একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন সময় এরকম কাজ গুলো করে।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই এই সংগঠনগুলো গঠিত হয়েছে।