কারাবন্দি রফিকুলের ভার্চুয়াল মিটিং করার ‘প্রাথমিক তথ্য’ মিলেছে

১৭ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

| শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিুল আমীন কারাবন্দি অবস্থায় মধ্যরাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ‘ভার্চুয়াল মিটিং’ করেছিলেন বলে ‘প্রাথমিক তথ্য’ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এরই মধ্যে এই ঘটনায় মোট ১৭ জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কারা অধিদপ্তর। কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন গতকাল শুক্রবার জানান, তদন্ত কমিটি কাজ করছে, যে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা যাচাই-বাছাই করছে কমিটি। ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুই মাস আগে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রিজন সেলে ভর্তি হন রফিকুল আমীন। কিন্তু সেখানে থেকেই তিনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে এখন অভিযোগ উঠেছে। খবর বিডিনিউজের।
বলা হচ্ছে, সমপ্রতি এক জুম মিটিংয়ে রফিকুল আমীন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক দিক নির্দেশনা দেন এবং দেশের বাইরে থেকে টাকা আনার বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। ডেসটিনির কয়েকজন কর্মকর্তাও সেখানে যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় ডিআইজি তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের সম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল বিএসএমএমইউ পরিদর্শন করেন।
গত মাসের শেষের দিকে সর্বশেষ বৈঠক হয় এমন তথ্য শোনা যাচ্ছে জানিয়ে কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, রাত ১টার দিকে এই ভার্চুয়াল বৈঠক হয় বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া একাধিকবার বৈঠক করেছেন এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। শুধু হাসপাতালে না কারাগারের ভেতরে থেকে এই ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে এমন তথ্যের ব্যপারে ওই কর্মকর্তা বলেন এই বিষয়টিও তদন্ত কমিটি দেখছে। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিদর্শক বলেন, এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত বলা যাবে।
কবে এই বৈঠক হয় সে ব্যাপারে এখনও তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রিসেন্ট, গত মাসের শেষের দিকে হয়তো। তবে প্রতিবেদন আসার পর বিস্তারিত বলা যাবে। কারা কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনায় চার প্রধান কারারক্ষী ইউনুস আলী মোল্লা, মীর বদিউজ্জামান, আব্দুস সালাম এবং আনোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া অপর সাত সহ-প্রধান কারারক্ষী জসিম উদ্দিন, সাইদুল হক খান, বিল্লাল হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, বরকত উল্লাহ, এনামুল হক এবং সরোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে বিভাগীয় মামলা হয়েছে কারারক্ষী মোজাম্মেল হক, জাহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন, কামরুল ইসলাম, শাকিল মিয়া এবং নবীন কারারক্ষী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান জানান, তারা বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আগে হাসপাতালে থাকা এসব বন্দিদের জন্য প্রধান কারারক্ষীদের দায়িত্ব দেওয়া হত। এই অবস্থায় এসব বন্দিদের ক্ষেত্রে এখন থেকে ডেপুটি জেলার থাকবেন বলে জানান মহাপরিদর্শক।
ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি দিয়ে ২০০০ সালে ডেসটিনি গ্রুপের যাত্রা শুরু। এক দশকের মধ্যে বিমান পরিবহন, আবাসন, কোল্ডস্টোরেজ, জুট মিল, মিডিয়া, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানি খুলে বসে এই গ্রুপ। কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালে মামলা হলে ওই বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হন রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা, বাকিরা লাপাত্তা হয়ে যান। দুদকের নোটিসে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা না দেওয়ায় গতবছর রফিকুল আমীনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএত প্রচারণা, তবুও মাস্ক নেই
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা