কাভার্ডভ্যানের পণ্য লুট করতে চালক-হেলপারকে খুন

সাত মাস পর রহস্য উন্মোচন গ্রেপ্তার দুজনের স্বীকারোক্তি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কাভার্ডভ্যানের মালামাল লুট করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই চালক রিয়াদ হোসেন সাগর ও হেলপার মো. আলীকে খুন করা হয়। খুনিরা তাদের পূর্ব পরিচিত ছিল। হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ সাত মাসের অনুসন্ধান ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত শুক্রবার রাতে খুনের ঘটনায় জড়িত মিরাজ হাওলাদারকে (৩০) পতেঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু সুফিয়ান সুজনকে (২১) আকবরশাহ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ দুজন ছাড়াও ঘটনায় রবিউল নামে অপর একজন জড়িত ছিল। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আসামিরা কাভার্ডভ্যানের চালক ও হেলপারকে মালামাল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
মিরাজ ও সুজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ২০২০ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি কোম্পানির গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চালক রিয়াদ হোসেন সাগর আর হেলপার মোহাম্মদ আলী। রিয়াদের পূর্ব পরিচিতি শেখ মিরাজ হাওলাদার আর আবু সুফিয়ান সুজন ঢাকা যাওয়ার কথা বলে তাদের আরেক সহযোগী রবিউল হোসেন বাবুসহ সিটি গেট থেকে ২ অক্টোবর রাত সাড়ে সাতটার দিকে কাভার্ডভ্যানে ওঠে। এর আগে চালক ও হেলপারকে নাস্তার সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কাভার্ডভ্যানটি নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু পথিমধ্যে চালক ও হেলপারকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে না পেরে খুনের পরিকল্পনা করে।
মীরসরাইয়ের নাহার এগ্রো পার হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে মিরাজ ড্রাইভারের গলা আর সুজন হেলপারের গলায় একযোগে ছুরিকাঘাত করে। মিরাজ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। একটু সামনে গিয়ে তারা গাড়ি আবার চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে আসে। আরও সামনে এসে হেলপার আলীর দেহ তারা সড়কের পাশে পানিতে ফেলে দেয়। কিন্তু আলী তখনো মারা না যাওয়ায় উঠে দাঁড়ায়। তখন খুনিরা পানিতে নেমে তার গলায় আবারও ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর কাভার্ডভ্যানের চালক সাগরের লাশ তারা হালিশহর থানা এলাকার লিংক রোডে ফেলে দেয়। তার আগে সাগরের চেহারা থেঁতলে দেয়, যাতে কেউ চিনতে না পারে।
এরপর কাভার্ডভ্যানের মালামালগুলো বিক্রি করার জন্য পার্টির সাথে যোগাযোগ করে তার মোবাইলটি বন্ধ পায়। এতে খুনিরা টেনশনে পড়ে যায়। পরে গাড়ি থেকে তিন হাজার টাকার তেল বিক্রি করে ও গাড়িতে পাওয়া ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ হাজার টাকা ভাগ করে নিয়ে যায় আসামিরা। এরপর কাভার্ডভ্যানটি বড়পুল এলাকার মনসুর মার্কেটের সামনে রেখে তারা পালিয়ে যায়। সাগরের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হালিশহর থানায় ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে এই খুনের রহস্য উদঘাটন করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধসিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ