নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। তালেবানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের এক সদস্যের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সামপ্রতিক দিনগুলোতে জনসমক্ষে দেখা যায়নি বারাদারকে। তবে তালেবানের কর্মকর্তারা বরাবরই এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।
এদিকে কাবুল দখলের এক মাস পর দ্রুত গতিতে অর্জিত তাদের সামরিক সাফল্যকে দীর্ঘস্থায়ী একটি শান্তিকালীন সরকারে রূপান্তর করতে গিয়ে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তালেবানকে। চার দশকের যুদ্ধ আর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর পর গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি দেখা গেলেও গত ২০ বছরে উন্নয়ন খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা দেশটির অর্থনীতি এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের।
গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটিকে ইসলামিক আমিরাত ঘোষণা করে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সবাই পুরুষ এবং জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতারা রয়েছেন। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব হামলার অভিযোগ রয়েছে।
তালেবানের একটি সূত্র জানায়, বারাদার ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বিনিময় হয়েছে। তখন সেখানে থাকা তাদের অনুসারীরাও পরস্পরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খলিল উর-রহমান হাক্কানি আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাদের সাথে সম্পৃক্ত কাতারভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা নিশ্চিত করেছেন, গত সপ্তাহেও একবার তর্কবিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
সূত্রগুলো জানায়, বিতণ্ডা তৈরি হওয়ার কারণ হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে সন্তুষ্ট নন বারাদার। তারা জানান, আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে সেই নিয়েই বিরোধের শুরু। বারাদার মনে করেন, তার মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়েছেন, কৃতিত্ব তাদের। তবে তালেবানের অন্যতম জ্যেষ্ঠ একজন নেতা পরিচালিত হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের মত, যুদ্ধের মাধ্যমে তারা এই বিজয় পেয়েছেন।
গুজব রয়েছে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছিল। তখন বারাদার আড়ালে চলে যান। সামাজিক মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি হয়ত মারা গেছেন। তালেবান সূত্র জানিয়েছে, বিতণ্ডার পর বারাদার কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং কান্দাহারে চলে গেছেন। সোমবার প্রকাশ হওয় বারাদারের একটি কথিত অডিও বার্তায় তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শোনা যায়, তিনি একটি সফরে রয়েছেন। ‘আমি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সকলে ভালো আছি।’
অর্থনৈতিক সংকট চোখ রাঙাচ্ছে : খরা ও দুর্ভিক্ষ দেশটির হাজার হাজার মানুষকে শহরে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আশঙ্কা, চলতি মাসের শেষ দিকে মজুদ থাকা খাদ্য ফুরিয়ে যেতে পারে। তেমনটা হলে এক কোটি ৪০ লাখ আফগান অনাহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে বলেও অনুমান তাদের।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জরুরি সহযোগিতা না মিললে ‘পুরো দেশই ধসে পড়বে’ এমন সতর্কবার্তার পর আন্তর্জাতিক মহল আফগানিস্তানকে একশ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে তালেবানঘোষিত নতুন সরকারে সব পুরনো নেতা ও কট্টরপন্থিরা স্থান করে নেওয়ায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে শীতল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে। কট্টরপন্থি ইসলামী এ গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতি দেবে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিতও মেলেনি। আফগানিস্তানের বাইরে দেশটির যে ৯০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি রিজার্ভ আছে, তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা ওঠার লক্ষণ নেই।