দীর্ঘ চার মাস সাত দিন পর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে। হ্রদে শুরু হয়েছে মাছ শিকার। গতকাল রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে হ্রদে মাছ শিকার শুরু হওয়ার পর ভোরবেলা থেকেই বিপণনকেন্দ্রগুলোতে মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা। জেলা শহরের প্রধান বিপণনকেন্দ্রসহ জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ির উপকেন্দ্রে ভোর থেকেই মাছ নিয়ে আসতে শুরু করেন মৎস্যজীবীরা। এরপর সেই মাছ পল্টুনে শুল্কহার আদায় শেষে বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবহনে তুলেছেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম দিনে এ বছর ৬৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ১৩ লাখ টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে প্রথম দিনে আহরণ কম হলেও চলতি বছর মাছের আহরণ ও রাজস্ব আদায় গত বছর থেকে বাড়বে বলেও জানান বিপণন কর্মকর্তারা। গত বছরের প্রথম দিনে ১২৭ মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোর থেকেই রাঙামাটির বিপণনকেন্দ্রে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এরপর ব্যবসায়ীদের কাছে সেই মাছ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিএফডিসির পল্টুনে হ্রদের মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে তোলা হচ্ছে পরিবহনে। বিভিন্ন ট্রাক–পিকআপ করে এসব মাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিপণনকেন্দ্রের পল্টুনগুলো মাছ অবতরণ করা হয় ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, প্রথম দিনে মাছ আহরণ দেখে খুশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তবে হ্রদে পানি বেশী থাকায় মাছ কম ধরা পড়েছে। কেচকি, চাপিলার আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি। এভাবে সারাবছর মাছ আহরণ হলে ব্যবসায়ীসহ এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত সকলেই লাভবান হবেন। কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদের আইড় মাছের আহরণ ও আকার বেড়েছে। তবে বিশেষ করে কেচকি ও চাপিলা মাছ ছোট পাওয়া যাচ্ছে। অন্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদে পানি অনেকটা বেশি। যে কারণে জেলেরা যেসব জায়গায় জাল ফেলে থাকেন সেখানে ওই পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে হ্রদের পানি ঘোলা হওয়ার কারণে মাছ পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বাড়তে পারেনি।
প্রসঙ্গত, প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে হ্রদের মাছ বিপণনসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। তবে চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ায় প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। নির্ধারিত তিন মাস সময়ের পর আরও একমাস সাত দিন পর শুরু হল কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার।