রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধের সময় আরও ১২ দিন বাড়ানো হয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা এই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ শুরু করতে পারবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভা থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। মৎস্য বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা ও ব্যবসায়িদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন–বিএফডিসি। খবর বিডিনিউজের।
রাঙামাটি বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ব্যবসায়ী ও জেলেদের চাহিদা এবং তাদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১৯ আগস্টের বদলে আগামী ১ সেপ্টম্বর থেকে লেকে মাছ শিকার শুরু করা যাবে।
হ্রদে প্রায় ২৭ হাজার জেলে মাছ ধরেন উল্লেখ করে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ব্যবসায়ীরাও এর সঙ্গে জড়িত। এটা ঠিক যে, দীর্ঘদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এখানকার ভোক্তারা প্রাণীজ আমিষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই সময় আরও কিছুটা বাড়ানো হলো। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে হ্রদে নামার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন স্থানীয় জেলেরা। জাল ও নৌকার মেরামত শেষ হয়েছে। তবে এখন বাড়তি আরও ১২ দিন সেগুলোর ব্যবহার হবে না। বাড়তি এসময়েও যেন ভিজিএফ সহায়তা অব্যাহত থাকে, সেই দাবি এখন তাদের।
পুরান জেলে পাড়ার বাসিন্দা সজল দাশ বলেন, তিন মাসের ভিজিএফ ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই মাসে পেয়েছি। আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও বন্ধের সময় বাড়ালে ভালো। কারণ এখন পানি ঘোলা থাকার কারণে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন হ্রদে পানি ছিল না। যে পোনা ছাড়া হয়েছে পানির কারণে সেগুলোও বড় হতে পারেনি। হ্রদের পানি ঘোলা এবং স্রোত বেশি থাকায় জেলেরা প্রত্যাশিত মাছ পাবেন না। সেকারণেই আমরা নিষেধাজ্ঞাকাল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। তবে বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু সৈয়দ বললেন ভিন্ন প্রসঙ্গে।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাল ব্যবহারে বিধিমালা করা না গেলে বন্ধের সুফল পাওয়া যাবে না। যে সাইজের জাল জেলেরা ব্যবহার করে তাতে পোনা মাছও রক্ষা পায় না। তাই জরুরি ভিত্তিতে জাল ব্যবহারের বিধিমালা করা প্রয়োজন। বিএফডিসির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লিপন মিয়া বলেন, কার্প জাতীয় মাছ এই সময়ের পর আর পোনা ছাড়ে না। তাই আর প্রজনন হওয়ার সুয়োগ নাই। তবে ২ সেন্টিমিটার জাল ব্যবহারের কারণে দেখা যায় প্রথম দিকে বেশি মাছ জালে ধরা পড়ে। কয়েক মাস পর আর হ্রদে মাছ পাওয়া যায় না। এ সমস্যার সমাধার হওয়া জরুরি। সভায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লিপন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবিস্তরের লক্ষ্যে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ থাকে।
সাধারণত মে মাসের ১ তারিখ নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও এবছর ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সে নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়িয়ে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। এবার পানি ঘোলা এবং স্রোত বেশি থাকায় বন্ধের সময়সীমা আরেকদফা বাড়ানো হলো।