গ্রীষ্ম বা শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ নির্ভর মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে নাব্যতা সংকটের কারণে রাঙামাটির ছয় উপজেলার সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগেই। গত ২৭ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। এছাড়া উপজেলার বাজারগুলোতে পণ্য পরিবহনেও বেড়েছে খরচ। তবে স্পিড বোটে করে নৌ পথে যাতায়াত করা গেলেও বেশি ভাড়া ও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার কারণে নৌপথের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের ফলে জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ছয় উপজেলার সঙ্গে সপ্তাহখানেক লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণার আগে থেকেই জেলার বাঘাইছড়ির সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। পানি সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ির মানুষ। নিরুপায় হয়ে দীর্ঘ সময় ভেঙে ভেঙে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। বিশেষ করে লংগদুর সঙ্গে জেলা সদরের যাতায়াতে লঞ্চ ভাড়া ১৮০–২০০ টাকা। সেখানে স্পিড বোটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা।
জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দা মঞ্জু দেব নাথ আজাদীকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে লংগদু গিয়েছিলাম। এই সময়ে লঞ্চ চলাচলে দুর্ভোগের কারণে স্পিডবোটেই গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর শুনেছি লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে। স্পিডবোটে যাতায়াত করা গেলেও বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হয় অন্য যাত্রীর জন্য। দুর্ভোগের শেষ নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার রাঙামাটি জোন চেয়ারম্যান ও জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈনুদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে নাব্যতা সংকটে লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হয়ে থাকে। হ্রদে পলি ভরাটের কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। সুবলং এলাকায় লঞ্চ আটকে যাচ্ছে। গত ২৭ এপ্রিল থেকে উপজেলাসমূহের সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে হ্রদে ড্রেজিংয়ের জন্য দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদের নৌপথে খননের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন নৌ–পথে চলাচলকারী যাত্রী ও লঞ্চ মালিক নেতারা। তবে এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে খননের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানোর কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং করার বিষয়ে আমি জেলাপ্রশাসক সম্মেলনেও বলেছি। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পাউবোর রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদের কাচালং ও রাইংক্ষ্যং চ্যানেলে খননের জন্য আমাদের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প পাস হলে নৌপথে খনন শুরু করা যাবে।
এদিকে, কাপ্তাই হ্রদে ক্রমাগত পানি কমে যাওয়ার কারণে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিটে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি না বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি আছে ৭৩ দশমিক ৬১ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও রুল কার্ড অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ৮১ দশমিক ৬২ এমএসএল। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ এমএসএল পানি কম আছে কাপ্তাই হ্রদে। বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে বৃষ্টিপাত হলেও হ্রদে পানির পরিমাণ তেমন বাড়েনি। হ্রদে পানি সংকটের কারণে পাহাড়ের কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে বেড়েছে ভোগান্তি।