কাপ্তাইয়ে ইউপি সদস্য খুন

নির্বাচনী সহিংসতা

কাপ্তাই প্রতিনিধি | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৪ অপরাহ্ণ

নির্বাচনী সহিংসতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় একজন ইউপি সদস্য খুন হয়েছেন। নিহত ইউপি সদস্য হলেন মো. সজিবুর রহমান (৪০)। তিনি ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য। এছাড়া তিনি রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও সদস্য ছিলেন।

নিহত সজিবুর রহমান গত ২ দফায় ৫নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য হয়ে জনসেবা করছিলেন। আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও তিনি সদস্য প্রার্থী হন।

কাপ্তাই থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) রাত প্রায় সাড়ে ১১টার সময় সজিবুর রহমানসহ কয়েকজন কাপ্তাই নতুন বাজারে টেক্সি স্ট্যান্ড সংলগ্ন মা বেকারির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এসময় হঠাৎ কয়েকজন ব্যক্তি এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। ঐ হামলায় সজিবুর রহমান মাথায় গুরুতর আঘাত পান।

এই ঘটনায় আলাউদ্দীন (৪৫), সালাউদ্দীন (৫৫) এবং আব্দুল জলিল নামে আরো তিনজন গুরুতর আহত হন। আহতদের রাতেই উদ্ধার করে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক রনি সজিবুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঐ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আরিফুল ইসলাম বাবু (২৫) নামে একজনকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয় বলে জানান কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন।

এছাড়াও আরো ৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, সজিবুর রহমানের হত্যার ঘটনায় রাতেই সমগ্র এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জড়ো হয়।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, ওসি মো. নাসির উদ্দিন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঈনুল হোসেন চৌধুরী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত করেন। ঐ ঘটনার পর রাতে পুরো এলাকায় যৌথবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।

আজ বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে কাপ্তাই আসেন।

জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বলেন, সজিবুর রহমানের হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং যথাযথ বিচারের মধ্যমে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে বলেও জানান তারা।

সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য তারা এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানান।

এদিকে, সজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকালে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। তিনি ঐ স্কুলের অভিভাবক ছিলেন বলে জানান স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহবুব হাসান বাবু।

এছাড়া, কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। বিকালে আসরের নামাজের পর নতুন বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, সজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নে ১১ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান বলেন, “বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।”

প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর কাপ্তাই উপজেলার ৩নং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী নেথোয়াই মারমাকেও সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। ঐ হত্যা ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন ১১ নভেম্বরের নির্বাচন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর নতুন তারিখ ঘোষণা করে। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে কাপ্তাইয়ে ২ জন প্রার্থী নির্মমভাবে খুন হওয়ায় অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের মাঝেও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদনের আদেশ ৩ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব নয়