কান নিয়েছে চিলে

মুনমুন বড়ুয়া | সোমবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, ব্যাংকে টাকা রাখলে সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না এই সংক্রান্ত একটি গুজব দেশের মানুষের মাঝে অনর্থক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। এরকম গুজব দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে এতটাই সংক্রমিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই গুজব মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রচার করার পরেও স্বস্তি ফেরানো যায় নি। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নিয়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ যাবৎকালে ব্যাংক থেকে এত টাকা উত্তোলন করার হিড়িক নিজেই একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাবে বিগত সপ্তাহে প্রত্যক্ষ করেছি। প্রবাসী ভাইয়েরা যারা নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রমের বিনিময়ে কষ্টার্জিত অর্থ পরিবার-পরিজনের সুখ সমৃদ্ধির কথা ভেবে দেশের ব্যাংকগুলোতে পাঠাতেন, নিজের সারা জীবনের সঞ্চিত আমানত নিরাপদে রেখে মনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন তারাও প্রতিদিন সুদূর প্রবাস থেকে দেশে ফিরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। যারা আসতে পারছেন না তারাও উদ্বেগপূর্ণ কণ্ঠে ফোন করে খবর নিচ্ছেন- ‘আপা, ব্যাংকে আমার আমানত হিসাবটি সুরক্ষিত থাকবে তো? কোনও সমস্যা হবে না তো!’ করোনা সংক্রমণের বিগত দুই বছরে বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স এর টাকা অবৈধ উপায়ের চেয়ে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই বেশি এসেছিল, যা ঐ অতিমারীর বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ‘ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে’ – এই মিথ্যা গুজবে কান দিয়ে প্রবাসীদের বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানো হার স্তিমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হওয়া এমন অনাস্থার বিপরীতে সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ তারল্য সংকটে পড়বে এবং চলতি অর্থবছরে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত ঘাটতি দেখা দেবে। এই সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশের সহজ সরল মানুষের মধ্যে আরো গুজব ছড়িয়ে যাবে। তাদের নানা প্রলোভনে পড়ে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নিজের কাছে রেখে হয় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবেন নতুবা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে নিজের সঞ্চয়কৃত অর্থ হারিয়ে আর্থিক সংকটে পড়বেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জনমনের এমন শঙ্কা দূরীভূত করে ব্যাংকিং খাতের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রচার প্রচারনা বৃদ্ধি করা উচিত এবং এই মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে যারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রিয় পাঠকের কাছে আমার উদাত্ত আহ্বান -যেকোন বিষয়ে ‘কান নিয়েছে চিলে’ এমন গুজবে অনর্থক নিজের উদ্বেগ না বাড়িয়ে যা শুনবেন তা বিশ্বাস করার আগে এর কোনও যৌক্তিক ভিত্তি আছে কিনা তা একটু বিবেচনা করে দেখুন। কারণ মিথ্যা প্ররোচনায় হুজুগে সব হারিয়ে গেলে নির্মম সত্যের যখন মুখোমুখি হতে হবে তখন অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতিবাচক চিন্তা করা উচিত
পরবর্তী নিবন্ধকালোত্তীর্ণ পুরুষ ছাবের আহমদ মাস্টার : এক পুণ্যাত্মার স্মারকগ্রন্থ