কানাডীয় শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ এনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গতকাল কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, হরদিপ সিং নিজ্জারকে ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা করা হয়েছে, যার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন। এই ঘটনা স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পরিপন্থী। তিনি বলেন, কানাডিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের এজেন্টদের সম্ভাব্য যোগসূত্রের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
এ ঘটনার জেরে অটোয়ায় ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) এর কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কার করেছে কানাডা। ভারতীয় এই কূটনীতিককে বহিষ্কারের পর ভারত দিল্লিতে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠায় এবং ভারতও কানাডার একজন সিনিয়র কূটনীতিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওই কূটনীতিকের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তাকে ভারত ছাড়ার জন্য ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি জানিয়েছে, আমরা কানাডার পার্লামেন্টে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেখেছি এবং তা প্রত্যাখ্যান করেছি। পাশাপাশি, সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকেও একইভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কানাডার মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের কোনও রকম হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একই ধরনের অভিযোগ কানাডার প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও করেছিলেন এবং তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এ বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে খুন হন দেশটির ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা ও খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কেটিএফের প্রধান হরদিপ সিং নিজ্জার। ৪৫ বছর বয়সী এ নেতা ভারতের পাঞ্জাবে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তানের সমর্থনে প্রকাশ্যে প্রচার–প্রচারণা চালাতেন। ভারত আগে হরদিপকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের বিরুদ্ধে ট্রুডোর তোলা অভিযোগের বিষয়ে তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। হোয়াইট হাউসেজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, আমরা কানাডীয় সহযোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কানাডার তদন্ত যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং দোষীরা বিচারের আওতায় আসে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। যুক্তরাজ্য সরকারের মুখপাত্রও জানিয়েছেন, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ‘গুরুতর অভিযোগের’ বিষয়ে কানাডীয় অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে ব্রিটিশ সরকার।