রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আরিফুল ইসলাম নামে এক জাপান প্রবাসীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কানাডা প্রবাসী এক নারী কৌশলে তাকে বাংলাদেশ এনে খুন করে ফের কানাডা চলে গেছেন। শনিবার বিকালে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাতে তা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের সি ব্লকের ১/এ বাসার দোতলা থেকে কম্বল দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় আরিফুলের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। মাটি প্রপার্টিজের বাসাটি অনলাইনে ভাড়া নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৭ মে স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে আরিফুল ইসলাম (২৮) ও পারভীন আক্তার (৩৪) সাত দিনের জন্য ওই বাসায় উঠেন। শনিবার মাটি প্রপার্টিজ থেকে ফোন পাওয়ার পর ওই বাসায় গিয়ে একজনের লাশ দেখতে পায় পুলিশ। তার বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। খবর বিডিনিউজের।
বাসায় থাকা বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে লাশটি জাপান প্রবাসী আরিফুল ইসলামের বলে শনাক্ত করা হয় জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রাজন বলেন, আরিফুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, বছরখানেক আগে দেশে এক জাপানি নারীর সঙ্গে আরিফুলের পরিচয় হয়। পরে সেই নারী আরিফুলকে জাপানে নিয়ে যান। বিয়ে করে তারা সেখানেই বসবাস করছিলেন।
এদিকে বসুন্ধরার ভাড়া বাসা থেকে কানাডা প্রবাসী পারভীন আক্তারের সঙ্গে আরিফুলের বিয়ের নোটারি করা হলফনামা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ‘বিবাহের ঘোষণাপত্র’ অনুযায়ী, তারা ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন বলেন, পারভীন আক্তার তার স্বামী বাবুর সঙ্গে কানাডায় থাকেন। তারা এবং আরিফুল তিনজনেরই বাড়ি নরসিংদীতে। পারভীনের সাথে আরিফুলের বিয়ে হয়েছে এবং সে ঢাকায় এসেছে। এসব বিষয় আরিফুলের পরিবার জানত না বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, মাটি প্রপার্টিজে দেওয়া পারভীনের মোবাইল নম্বরের তথ্য এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পারভীন ১৭ মে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পরে সেখান থেকে একই দিন বিকাল ৪টার দিকে পারভীন ও আরিফুল একসাথে এই ফ্ল্যাটে উঠেন এবং পরের দিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন আক্তার একাই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান।
পারভীনের মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান শাহজালাল বিমানবন্দর দেখা গেছে জানিয়ে রাজন সাহা বলেন, পারভীন শুধু একদিনের জন্য ঢাকায় এসে আরিফুলকে খুন করে আবার কানাডা চলে গেছেন। আরিফুলও একই দিন জাপান থেকে ঢাকায় আসেন।
ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেটি পারভীনের লেখা বলে পুলিশ ধারণা করছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই রেপিস্ট, ব্ল্যাকমেইলার। সে তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট, ব্ল্যাকমেইলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’
পুলিশ কর্মকর্তা রাজন বলেন, চিরকুট, সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে পারভীন আক্তার এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পারভীনকে কানাডা থেকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।