গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছেড়ে গেলেন তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়ে এ ব্যাখ্যা দিতে বলেছে আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বাংলাদেশে তিন মাস ছিলেন। এরপরও তিনি কোথায়–কীভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তিনি কীভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন, এ ব্যাপারে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেওয়া হয় সে ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কাদেরের দেশে থাকা না থাকার প্রমাণ সরকারের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, ওবায়দুল কাদেরের দেশে অবস্থানের বিষয়ে তথ্য থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি জাতীয় ট্রাইব্যুনাল। এটি জাতির আশা–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনালের আদেশ–নির্দেশ যদি কোনো সংস্থা বা বাহিনী না মানেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা রাষ্ট্রের কাজে সহযোগিতা করছেন না এবং আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না।
তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অবস্থায় তাদের শুধু এটুকু বলব, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মানতে হবে। এটা আপনার আইনগত দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রশ্ন। যদি কেউ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরও কোনো আসামিকে পালাতে সহযোগিতা করে তাহলে ধরে নিতে হবে তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা এখনই সেদিকে যাব না। সবার প্রতি আহ্বান জানাব, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য নয়, বরং আপনারা আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি আপনাদের আনুগত্য দেখাবেন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক খবর দিয়েছে, সরকার পতনের পর তিন মাস ওবায়দুল কাদের দেশেই ছিলেন। পরে তিনি বিদেশে চলে যান।
কাদেরের থাকা না থাকার প্রমাণ সরকারের হাতে নেই : ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন এবং পরে দেশ ছেড়েছেন–এমন প্রমাণ সরকারের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক ইস্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের ও অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেশত্যাগের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। অনেকগুলো বিষয় জানতেও পেরেছি। ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশে ছিলেন কি ছিলেন না, সেই প্রমাণ সরকারের হাতে নেই।
কাদেরের খবর থাকলে ধরে ফেলতাম : ওবায়দুল কাদেরের দেশে অবস্থানের বিষয়ে তথ্য থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনি কোথা থেকে জানল যে (কাদের) তিন মাস বাংলাদেশে লুকায়ে ছিল। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম অবশ্যই ধরে ফেলতাম। যদি আগে এই খবরটা উনারা দিতে পারত, উনি ওই জায়গায় লুকিয়ে আছে, আমরা অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা বলেন, আপনারা একটা খবর দিছেন, কেউ ওই জায়গায় লুকায়ে আছে, আমরা ধরি নাই, এমন একটা এঙাম্পল দেন। আমরা কি ছাড় দিচ্ছি?
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ইন্টারপোলের ক্ষেত্রে আমরা অলরেডি আবার রিমাইন্ডার দিছি। আমরা টাইম টু টাইম অবহিত করতেছি তাড়াতাড়ি পাবলিশের জন্য। গায়েবি মামলার বিষয়ে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আবারও আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা এটা বিজ্ঞপ্তি আকারেও দিছি। আজকেও আলাপ হইছে। আমরা আশ্বস্ত করি, যারা দোষী না তাদের কোনো কিছু হবে না।
পুলিশের পলাতক সদস্যদের বিষয়ে বলেন, যারা পালিয়ে আছে, তারা আমাদের চোখে ক্রিমিনাল। তাদের যেকোনোভাবে পাওয়া হলে ধরা হবে। আপনারা যদি খবর দিতে পারেন আমরা ধরে ফেলব।