কাঠগড়া থেকে বিচারকের দিকে জুতা নিক্ষেপ আসামির

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

দুপুর ১২ টা। কাঠগড়ায় হাজির কয়েকজন আসামি। রাষ্ট্র, আসামি পক্ষের আইনজীবী, পুলিশ ও কোর্ট সংশ্লিষ্টরাও ছিলেন। অপেক্ষা বিচারকের। খাস কামরা ছেড়ে বিচারকও আসলেন। আসন গ্রহণ করবেন। এমন সময় আদালত কক্ষে ঘটে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা। কাঠগড়ায় থাকা এক আসামি ‘জামিন দিচ্ছিস না কেন’ বলে নিজের জুতা নিক্ষেপ করেছে বিচারকের দিকে। তবে তা শরীর স্পর্শ করে নি। বিচারকের উপর দিয়ে গিয়ে পড়ে ফ্লোরে। তাৎক্ষণিক আদালত কক্ষে অন্যরকম একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হতভম্ব, উত্তেজিত হয়ে পড়ে আইনজীবীরা। তারা জুতা নিক্ষেপ করা আসামির দিকে তেড়ে যায়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাদের নিষ্কৃত করেন। এরপর আদালতের প্রতি আবেদন জানানো হয়, আসামিকে কাস্টডিতে পাঠানো হোক। এরই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত আসামিকে প্রথমে আদালতের হাজতখানা এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবিরের আদালতে এই ঘটনা ঘটে। জুতা নিক্ষেপ করা ব্যক্তি হলেন মো. মনির খাঁ মাইকেল।

তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের গোলাপ খাঁর ছেলে। ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি নাসিরনগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মো. মনির খাঁ মাইকেলের বিরুদ্ধে এসআই তপু সাহা একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ, মো. মনির খাঁ মাইকেল নিজ ফেসবুক আইডি থেকে মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা সম্পর্কে প্রপাগান্ডা চালানো, মিথ্যা ভীতি প্রদর্শন, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মো. মনিরসহ কাঠগড়ায় কয়েকজন আসামি ছিলেন। পুলিশ ও আমরাও ছিলাম। বিচারক নিজ আসনে বসবেন এমন সময় নিজের জুতা ছুড়ে মারার ঘটনাটি ঘটে। কাঠগড়ায় জুতা খুলে রেখে উঠতে হয়। বিচারক নিজ আসনে বসবেন এমন সময় আসামি মনির খাঁ পাশে খুলে রাখা জুতা টেনে নিয়ে নিক্ষেপ করেন। বিচারকের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে পড়ে তা। তাৎক্ষণিক আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিনের আইন পেশায় এমন ঘটনা আর দেখিনি। আদালত কক্ষে থাকা আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে তার দিকে তেড়ে যায়। আমি সবাইকে আটকিয়েছি। একপর্যায়ে আদালতকে বলি, তাকে কাস্টডিতে পাঠানো হোক। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, জামিন দিচ্ছিস না কেন, মেরে ফেলবসহ বিচারকের উদ্দেশ্যে নানা কথা বলেন তিনি। দেখে একটু ডিস্টার্ব ধরণের মনে হল তাকে। এলোমেলো কথা বলছিলেন। জেলা পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার হেফাজতে ছিলেন মো. মনির খাঁ মাইকেল। তাই প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কর্তব্য কাজে বাধা, হুমিক প্রদান সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকির হেসাইন মাহমুদ আজাদীকে বলেন, আদালত কক্ষে একজন আসামি এমনটা করতে পারেন না। এটি নিশ্চিতভাবেই অপরাধ। সংশ্লিষ্ট থানায় তার বিষয়ে খবর নিয়েছি। জানা গেছে, তিনি কিছুটা উগ্র টাইফের। আমরা তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছি। বাকী কাজ থানা করবে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবাইদুল হক আজাদীকে বলেন, বিচারকের দিকে জুতা নিক্ষেপের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আদালতসূত্র জানায়, নাসিরনগর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মো. মনির খাঁ মাইকেল প্রথম গ্রেপ্তার হয় ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি। পরে তিনি জামিন নেন। পরের বছরের ২ আগস্ট তার জামিন বাতিল হয়। জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৩ জুলাই তিনি ফের গ্রেপ্তার হয়। তখন থেকে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

সূত্র জানায়, গতকাল মামলার শুনানির তারিখ ছিল। মো. মনির খাঁ মাইকেলের পক্ষে তার আইনজীবী একটি জামিন চেয়ে দরখাস্ত দেন। সে অনুযায়ী তাকে কারাগার থেকে হাজির করা হয়। জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত করেন। মো. মনির খাঁ মাইকেলের পক্ষে এর আগেও একবার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেটি নামঞ্জুর হয়।

এ বিষয়ে মো. মনির খাঁ মাইকেলের আইনজীবী মো. নুরুজ্জামান হোসাইন আজাদীকে বলেন, মনিরকে কোর্টে তোলা হবে জানতাম। তবে আমি উপস্থিত ছিলাম না। ঘটনার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ফোনে আদালত কক্ষে ছুটে যায়। আদালতের সাথে সে যা করেছে তা খুবই খারাপ। তার আচরণ ভালো ছিল না। এতে আমরা আইনজীবী সমাজ ক্ষুব্দ। আদালতের প্রতি অনুতপ্ত। আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। পাশাপাশি মনিরের পক্ষে জামিন চেয়ে করা আবেদনটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। মনির খাঁ মাইকেল পাগল ও প্রতিবন্ধী টাইফের বলেও জানান তার আইনজীবী।

আদালত সূত্র আরো জানায়, নাসিরনগরের মামলায় ২০২১ সালের ২০ জুন মো. মনির খাঁ মাইকেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. হাবিবুর রহমান। এরপর চার্জগঠনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। ১২ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে এ পর্যন্ত তিনজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়, মো. মনির খাঁ মাইকেল পেশায় একজন হকার। কুমিল্লা শহরে দুই টাকার মাল ফেরি করে বিক্রি করতেন। মাঝে মাঝে নিজ বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন। তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সমর্থক বলেও চার্জশিটে বলা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপর্যটন ও বিনোদন এলাকায় হকার উচ্ছেদের ঘোষণা মেয়রের
পরবর্তী নিবন্ধডিজিটাল লটারির ফল প্রকাশ, ৫ দিনের মধ্যে স্কুলে ভর্তি