আসছে মাদক, যাচ্ছে মাদক। বলতে গেলে মাদকের ট্রানজিট রুট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আসছে ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজা, যাচ্ছে ইয়াবা ও আইস। উভয় ক্ষেত্রেই চট্টগ্রামকে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কাট–আউট পদ্ধতিতে মাদকের চালান পাচার হওয়ায় ধরা পড়ছে না গডফাদাররা। মিয়ানমার হয়ে টেকনাফ এবং ভারত থেকে বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে আসা মাদক বন্দর নগরী হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এ অবস্থায় কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রামকেও মাদকপ্রবণ এলাকা হিসাবে ঘোষণার চিন্তা–ভাবনা করছে সরকার।
কখনো সড়ক, কখনো সমুদ্রপথে মাদক পাচার হচ্ছে চট্টগ্রামে। মাদক বহনের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা কৌশল। ওল কচু থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, এমন কোনো পণ্য নেই যার মাধ্যমে মাদক পাচার হচ্ছে না। আর পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচার এখন প্রতিদিনের ঘটনা। র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ৫ শতাধিক অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৪৫ লাখ পিস ইয়াবা, ২০ হাজার বোতল ফেনসিডিল এবং ৭ হাজার কেজি গাঁজা। আর এসব মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৭০০ মাদক বহনকারী।
র্যাবের সূত্র মতে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা ও মাদক আইস চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়াচ্ছে। আবার তেমনি পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আফিম ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে আসছে গাঁজা ও ফেনসিডিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াবার চালান টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রামের আনোয়ারা–কর্ণফুলী উপকূলীয় এলাকায় খালাস হচ্ছে। আর সড়কপথে ইয়াবার চালানের রুট পরিবর্তন হচ্ছে শাহ আমানত সেতু এলাকায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, নিয়মিত টহল জোরদার আছে। সিএমপির মোবাইল টিম দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা প্রতিটি গাড়ি চেক করছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এক হাজারের বেশি বাহক আটক হলেও গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। কাট–আপ পদ্ধতিতেই ক্যারিয়াররা মাদক পাচার করায় মূল হোতাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে দাবি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, তারা মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং সিমকার্ড ও মোবাইল ক্র্যাশড করে ফেলে। ফলে তাদেরকে ট্র্যাক করা সহজ হয় না। মাদক আইনের সঙ্গে মানি লন্ডারিং ধারা যুক্ত হলেই মাদক পাচার কমে আসতে পারে বলে মত তার।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী চট্টগ্রামের একাধিক থানার ওসি জানান, মাদক ব্যবসা করে যারা বিশাল টাকার মালিক হয়েছে, সে টাকার উৎস কী এ বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশে চলমান মানি লন্ডারিংয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। তাহলে এ প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে।
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে মাদক আইনে দায়ের করা ৬ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর তদন্ত পর্যায়ে পুলিশের কাছে রয়েছে অন্তত ৩০০ মামলা।
বিজিবি জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ইয়াবার পাশাপাশি দেশে আসছে আইসের বড় চালান। মিয়ানমারে ইয়াবা ও আইসের কারখানা আছে। কারখানাগুলো বন্ধের বিষয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারে জাতিগত যে অস্থিরতা চলছে, এই সুযোগে মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। অভিযানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি না হলে মাদক নির্মূল খুব কঠিন।