চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার নয়টি প্রকল্পকে তিনটিতে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনাকালে চাপে থাকা অর্থনীতিতে সাশ্রয় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় নতুন এই পদ্ধতি চালু করেছে সরকার। অঘোষিতভাবে প্রকল্প খরচ কমানোর লক্ষ্যে নতুন এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এতে একই ধাচের কাজের জন্য পৃথক পৃথক প্রকল্প গ্রহণ না করে অনেকগুলো কাজকে একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতিতে প্রকল্প ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হচ্ছে নর্থ সাউথ-ওয়ান। এই প্রকল্পের আওতায় ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামী রোড থেকে আগ্রাবাদ এঙেস রোড পর্যন্ত একটি চার লেনের সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ৮০ থেকে ১০০ ফুট প্রস্থ এই সড়কটি ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড থেকে জালালাবাদের পাশ দিয়ে জাকির হোসেন রোডের চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের পাশ দিয়ে পাহাড়তলী হয়ে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে যুক্ত হওয়ার কথা। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে এই প্রকল্পে।
সিডিএর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে নর্থ সাউথ-২। এই প্রকল্পের আওতায়ও চার লেনের ৮০ থেকে ১০০ ফুট চওড়া প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের কথা। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের পাশ থেকে শুরু করে অনন্যা আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে কুয়াইশ রাস্তার সাথে গিয়ে যুক্ত হওয়ার কথা এই সড়কের। সড়কটির ব্যায়ও নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। সিডিএ পৃথক পৃথকভাবে প্রকল্প দুটি গ্রহণ করলেও এখন দুটি প্রকল্পকে একটি করে নতুন ডিপিপি দাখিল করতে বলা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (নর্থ সাউথ-১ ও নর্থ সাউথ-২) এই দুই প্রকল্পকে একটি প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
অপরদিকে নগরীর ছয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পকেও একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিদ্যমান ২০ থেকে ২৫ ফুট বাড়িয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি রাস্তাকে ৬০ ফুটে উন্নীত করার এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে গনিবেকারি, কাজীর দেউড়ি থেকে গোলপাহাড় মোড়, লাভলেইন থেকে চেরাগী পাহাড় এবং নন্দনকানন, ফিরিঙ্গীবাজার থেকে সদরঘাট মোড়, কমার্স কলেজ মোড় থেকে মাদারবাড়ী-বারিক বিল্ডিং রোড সংযোগ সড়ক এবং অনন্যা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে যাওয়া অঙিজেন-কুয়াইশ রোডকে একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই ছয়টি সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে করা হবে।
এদিকে সিটি আউটার রিং রোডকে সাগরিকা থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ এবং আউটার রিং রোড থেকে বড়পুল পর্যন্ত ফিডার রোড নির্মাণকেও একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটারের এই সড়ক নির্মাণে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সাগরিকা থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা করে মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে আসা একটি রাস্তার সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। এই রাস্তাটি কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অপরদিকে এই রাস্তার সাথে একটি ফিডার রোড এনে নগরীর বড়পুলে পোর্ট কানেকটিং রোড এবং আগ্রাবাদ এঙেস রোডের সাথে যুক্ত করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নয়টি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করত। কিন্তু করোনাকালে খরচ সাশ্রয় করতে উপরোক্ত নয়টি প্রকল্পকে তিনটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, আলাদা আলাদা প্রকল্প হলে খরচ বাড়ে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হয়, গাড়ির সংস্থান করতে হয়। আরো নানা খাতে খরচ বৃদ্ধি পায়। কয়েকটি সড়ক একই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হলে খরচ অনেক সাশ্রয় হবে বলে তারা মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেকগুলো সড়ক নিয়ে কাজ করছি আমরা। বিশেষ করে আগামী ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সব রাস্তার কাজ আমরা শুরু করছি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বা কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মিত হলে চট্টগ্রামে ৫০ লাখ লোক বাড়বে মন্তব্য করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, বাড়তি এসব মানুষের চাপ সামলাতে আমরা অনেকগুলো রাস্তার কাজ করতে যাচ্ছি। তবে এবার আমরা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এসব কাজ করছি। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ না করে একই ধরনের কাজের কয়েকটিকে একই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। তাই আমরা আমাদের নয়টি সড়কের কাজকে তিনটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। প্রকল্প তিনটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে নগরীতে যান চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ততদ্রুত ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেন সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস।