কাজে লাগছে না বন্দরের তিনটি জেটি

ছোট জাহাজ কমেছে, বড় জাহাজ আসায় এই পরিস্থিতি ।। সংকট তৈরি করছে না : কর্তৃপক্ষ

হাসান আকবর | রবিবার , ২০ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

জাহাজের আকৃতি বড় হওয়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি কন্টেনার জেটি এবং একটি খোলা পণ্যবাহী জেটি ‘নেই’ হয়ে গেছে। এতে করে আগে যে পরিমাণ জাহাজ বার্থিং দেওয়া যেত তার থেকে তিনটি জাহাজ কম বার্থিং দিতে হচ্ছে। তবে বড় জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রভাব বন্দরের সার্বিক কন্টেনার কিংবা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে পড়ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বের নানা দেশ থেকে বছরে চার হাজারের বেশি জাহাজ পণ্য নিয়ে আসে। এই বিপুল সংখ্যক জাহাজ বন্দরের ১৩টি সাধারণ বার্থ, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) ৩টি জেটি, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ৫টি জেটি, ২টি ডলফিন জেটি এবং ৬টি রিভার মুরিং জেটিতে বার্থিং নিয়ে পণ্য খালাস করে। বন্দরের ১৭টি মূল জেটির মধ্যে ১ নম্বর জেটি এখন নেই। বন্দরের বার্থিং রিপোর্টে ১ নম্বর জেটির উল্লেখ থাকে না। এই জেটিতে এখন কোনো জাহাজই বার্থিং দেওয়া হয় না। ড্রাফট না থাকায় এই জেটি জাহাজ বার্থিং দেওয়ার উপযোগী নেই বলে জানিয়েছেন বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মাঝেমধ্যে এই জেটিতে বন্দরের সার্ভিস বোটগুলো নোঙর করা থাকে। এই জেটি এখন আর আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজে লাগে না। অপরদিকে বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের ৯, ১০, ১১, ১২ এবং ১৩ নম্বর জেটি কন্টেনার জেটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অনেক বছর ধরে। কিন্তু এখানে ১২ নম্বর জেটিতে কোনো জাহাজ বার্থিং দিতে পারে না। শুধু ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটির মধ্যে ৪টি কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কন্টেনার জাহাজের চাপ বেড়ে গেলে ৬ নম্বর জেটিও কন্টেনার জেটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১২ নম্বর জেটি বার্থিং রিপোর্টে থাকলেও ‘নো স্পেস’ উল্লেখ থাকে। এই জেটিতে একসময় জাহাজ বার্থিং দেওয়া হলেও এখন আর সম্ভব হয় না। জাহাজের আকৃতি বড় হয়ে যাওয়ায় এই জেটি ‘নেই’ হয়ে গেছে। অপরদিকে বন্দরের অত্যাধুনিক কন্টেনার টার্মিনাল হিসেবে বিবেচিত চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) তিনটি জেটির একটি ‘নেই’ হয়ে গেছে। সিসিটি, সিসিটি২ এবং সিসিটি৩ নামের তিনটি জেটিতে একসময় তিনটি জাহাজ বার্থিং দেওয়া হতো। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই টার্মিনালে। ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই টার্মিনালের একটি জেটি ‘নেই’ হয়ে যাওয়ার পেছনে বড় জাহাজ দায়ী বলে সূত্র জানিয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, আগে বন্দরে যেসব কন্টেনার জাহাজ আসত সেগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ১৪০ মিটার। এই ধরনের তিনটি জাহাজ অনায়াসে ৪৫০ মিটার দীর্ঘ টার্মিনালে বার্থিং দেওয়া যেত। তিনটি জেটিতে নোঙর করা তিনটি কন্টেনার জাহাজে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হতো। কিন্তু দিনে দিনে জাহাজের আকৃতি বড় হয়েছে। বিশ্বের শিপিং সেক্টরে ছোট জাহাজের কদর কমে গেছে। পণ্য পরিবহন খরচ সাশ্রয় করতে এখন বড় জাহাজে একসাথে অনেক বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ১৬০ মিটার থেকে ১৮৫ মিটার দীর্ঘ কন্টেনার ভ্যাসেল চলাচল করে। এই মাপের বড় জাহাজ তিনটি বার্থিং দেওয়ার সুযোগ সিসিটিতে নেই। ফলে সিসিটি১ এবং সিসিটিএ জাহাজ নোঙর করা হলেও মাঝের সিসিটি২ নম্বর জেটিতে এখন আর জাহাজ বার্থিং দেওয়া হয় না। এতে করে বন্দরে তিনটি জেটি এখন আর কাজে লাগে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতি কোনো সংকট তৈরি করছে না বলে দাবি করে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কন্টেনার জাহাজের আকৃতি বড় হওয়ায় এখন জাহাজগুলোতে আগের তুলনায় অনেক বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। ফলে সংখ্যায় কম হলেও আকৃতির কারণে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে না। তবে ভবিষ্যতে এসব জেটি সংস্কার করা হলে তখন জাহাজের দৈর্ঘ্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি, যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা