চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে বসানো চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৭৪টি হাইড্রেন্ট ফায়ার সার্ভিসের কোনো কাজে আসছে না। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে যে পরিমাণ পানির প্রেসার থাকা দরকার সেই পরিমাণ প্রেসার নেই বলে অভিযোগ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের। তবে ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহার নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কোনো ভবনে আগুন লাগার পর পানি উত্তোলনের জন্য পাইপ লাগানোর পর যে পরিমাণ পানির প্রেসারের দরকার হবে সেই পরিমাণ পানির প্রেসার নেই। যার কারণে ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো কাজে আসছে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এক প্রকৌশলী জানান, ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরীতে প্রথমবারের মতো হাইড্রেন্ট বসিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাইড্রেন্টের নমুনা নিয়ে এসব স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে কাজ করা হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন শেষ হওয়ার পর ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বেশ কয়েকটি সভাও করেছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট কেন ব্যবহার করছে না তা জানা নেই। এখন তারা অন্য কথা বলছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম নগরীতে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করেছিল ওয়াসা। এতে ওয়াসার ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে এবং কয়েক দফা আলোচনা করে এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তারা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরে আরো ১৪৪টি হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক আজাদীকে বলেন, হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে যে পরিমাণ পানির প্রেসার থাকা দরকার সেই পরিমাণ প্রেসার নেই। যার কারণে এটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না। যেমন আগুন লাগার পর প্রথম তলায়, দ্বিতীয় তলায় এবং তৃতীয়–৪র্থ তলায় পানি উত্তোলনের জন্য পাইপ লাগানোর পর যে পরিমাণে পানির প্রেসারের দরকার হবে সেই পরিমাণ প্রেসার নেই এগুলোতে। যার কারণে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, হাইড্রেন্টে পানির চাপ কম। এগুলো ব্যবহার করতে ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক) বা ৪০ থেকে ৭০ মিটার উঁচুতে তোলার পানির চাপ প্রয়োজন। কিন্তু হাইড্রেন্টে পানির চাপ আছে একবার। এতে ১০ মিটার উপরে ওঠানো সম্ভব। অন্যদিকে হাইড্রেন্টের সঙ্গে হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হাইড্রেন্টের সঙ্গে পাইপ সংযুক্ত করতে যে অ্যাডাপ্টর লাগবে সেটিও নেই।
দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। দুই সংস্থাকে একসঙ্গে বসে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার ওপর গুরুত্ব দেন তারা।