শিক্ষা, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক আন্দোলনে কাজেম আলী মাস্টার একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। জন্ম ১৮৫২ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে। স্বদেশী, অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন সহ সমাজ সেবামূলক নানা কাজে এগিয়ে আসা চট্টগ্রামের উৎসাহী তরুণদের মধ্যে কাজেম আলী মাস্টার ছিলেন অন্যতম।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষা বিস্তারে কাজেম আলী মাস্টার বিশিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। হুগলি থেকে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শিক্ষকতা করেন কিছুকাল। পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে ১৮৮৫ সালে নিজেই গড়ে তোলেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – চিটাগাং মিডল ইংলিশ স্কুল, যা ১৯৮৮-তে চিটাগাং হাই ইংলিশ স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজেম আলীর দক্ষতা আর অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলটি সাফল্য অর্জন করে, পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রামে বেশ কিছু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা তৈরি ও পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক আদর্শে কাজেম আলী ছিলেন আপসহীন। অনলবর্ষী এই বক্তা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে চট্টগ্রামে কংগ্রেস-খেলাফত কমিটির আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। এ সময় এক বিশাল জনসভায় তাঁকে ‘শেখ-ই-চাটগাম’ উপাধি দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতা ও ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের আন্দোলনে মূল উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন তিনি। অসহযোগ আন্দোলনে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সহকর্মী ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।
কাজেম আলী অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি, খাদেমুল ইসলাম সোসাইটি, খিলাফত কমিটিসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বহুকাল। দেশের মানুষের মুক্তিই ছিল তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন। তাই পরাধীনতার শৃঙ্খলে থেকে সরকার প্রদত্ত ‘খান বাহাদুর’ উপাধি বর্জন করেন তিনি। জনসেবায় নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য দু বার তাঁকে ‘কায়সার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ১৯২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে দিল্ল্লিতে অবস্থানকালে তাঁর মৃত্যু হয়।