কাজী আবদুল ওদুদ : মুক্তবুদ্ধি ও মুক্ত সংস্কৃতির আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ

| সোমবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে কাজী আবদুল ওদুদ এক বিশিষ্ট নাম। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা হিসেবেও তিনি সমাজে নবজাগরণ ঘটাতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। কাজী আবদুল ওদুদের জন্ম ১৮৯৪ সালের ২৬শে এপ্রিল ফরিদপুর জেলার বাগমারায়। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ পাস করেন তিনি। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল উদার, অসামপ্রদায়িক, মানবতাবাদী ও প্রগতি চেতনায় সমুজ্জ্বল। আর এর ওপর ভিত্তি করেই নিজের জীবন ও কর্ম ছিল প্রবহমান। তাঁর নেতৃত্বে ১৯২৬ সালে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’। ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে খ্যাত প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলন বিকাশের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও পশ্চাৎপদতা ছিন্ন করে যুক্তি আর মুক্ত বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোই ছিল এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। এর বার্ষিক মুখপত্রের নাম ছিল ‘শিখা’। শিখার মূল বাণী ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। কাজী আবদুল ওদুদ কথাসাহিত্য, সমালোচনা, প্রবন্ধ ও অভিধান রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাঁর সংকলন ও সম্পাদনায় ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘ব্যবহারিক শব্দকোষ’। অন্যান্য রচনার মধ্যে উপন্যাস ‘মীর পরিবার’, ছোটগল্প ‘নদীবক্ষে’, প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘শাশ্বত বঙ্গ’, ‘রবীন্দ্রকাব্য পাঠ’, ‘হিন্দু মুসলমানের বিরোধ’, ‘নজরুল প্রতিভা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ওদুদ রচিত জীবনীগ্রন্থ ‘হজরত মোহাম্মদ ও ইসলাম’, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘কবিগুরু গ্যেটে’ বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ‘পথ ও বিপথ’ নামে একখানা নাটকও লিখেছিলেন তিনি। করেছেন পবিত্র কোরআনের বঙ্গানুবাদ। যুক্তিবাদী চিন্তা ও মননের বিকাশে আজীবন নিবেদিত এই মনীষী ১৯৭০ সালের ১৯ মে প্রয়াত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবিকাশ চৌধুরী বড়ুয়ার কলামে তথ্য ও পর্যালোচনাগত অপরিপক্বতা