কাঙ্ক্ষিত ফলনেও খুশি হতে পারছেন না কৃষক

বাঁধাকপি খুচরা বাজারে ২০ টাকা হলেও তাদের বেচতে হচ্ছে পাঁচ টাকা!

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

শীত মৌসুম শুরু হলে মাতামুহুরী নদীতীরের সাড়ে তিন কানি জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মরিচের আবাদ করেছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মীর কাশেম। তদ্মধ্যে ভাল দাম পাওয়ার আশায় কেবল দুই কানি জমিতেই আবাদ করেন বাঁধাকপির। পনের দিন আগে প্রথমবার যখন ক্ষেত থেকে বাঁধাকপি তোলা হয় তখন প্রতিকেজির বিপরীতে দাম পেয়েছিলেন ১২ থেকে ১৫ টাকার মতো। এরপর পর্যায়ক্রমে সেই দাম এখন নেমে এসেছে মাত্র চার থেকে পাঁচ টাকায়।

কৃষক মীর কাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুই কানি জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করতে গিয়ে সর্বসাকূল্যে আমার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকার মতো। পরিণত হওয়ার পর সেই বাঁধাকপি প্রথম চালানে বিক্রি করে পেয়েছি ৮০ হাজার টাকা। এরপর আরো দুই দফা ক্ষেত থেকে তোলা হয় পরিণত বাঁধাকপি। একেকটি ওজন দাঁড়ায় দেড় থেকে দুই কেজিতে। সবমিলিয়ে তিনদফায় আমি বাঁধাকপি বিক্রি করে পেয়েছি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

কৃষক মীর কাশেমের মতে, আড়তদাররা প্রতিদিনই সরাসরি মাঠে এসে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে রকমারি সবজি সংগ্রহের পর তা গাড়িভর্তি করে আড়তে নিয়ে যান। যারা আড়তদার তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সেই সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে সবজির ভর মৌসুমে হঠাৎ করে দাম কমিয়ে দেয়। এতে প্রথমদিকে লাভের ভাল মুখ দেখলেও মাঝপথে এসে দাম কমিয়ে দেওয়ায় কৃষকেরা প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিওবা চকরিয়ার খুচরা বাজারে এখনো এক কেজি বাঁধাকপির দাম নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকার মতো।

সেই জায়গায় এখন কৃষক পাচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা। একই এলাকার আরেক কৃষক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, আমার পাঁচ কানি জমি রয়েছে। তদ্মধ্যে তিন কানিতে বাঁধাকপি এবং বাকি জমিতে অন্যান্য সবজির আবাদ করি। কিন্তু যে আশা নিয়ে বাঁধাকপির আবাদ করেছিলাম, সেই আশায় গুঁড়েবালি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষকেরা হাড়ভাঙা খাঁটুনি করে, লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সবজির আবাদ করেছিলেন। কারণ দেশের খুচরা বাজারে এখনো বাঁধাকপি প্রতিকেজিতে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকার বেশি। সেখানে আমাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকায়। তাহলে কৃষকের লাভ তো যাচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগী আড়তদার বা পাইকারদের পকেটে।

বিএমচরের পুচ্ছলিয়া পাড়ার কৃষক জামাল হোসেন জানান, দিগন্তজোড়া সবজির মাঠে মাঠে পড়ে রয়েছে উৎপাদিত বাঁধাকপিসহ রকমারি সবজি। সেই সবজি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে মাঠেই পচে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেটের নির্ধারিত দামেই প্রান্তিক কৃষকেরা সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই কৃষক বলেন, যদি তাদের বেঁধে দেওয়া দামে সবজি বিক্রি না করি, তাহলে তো পুঁজিও তোলা সম্ভব হবে না। তাই পড়তি দাম মেনে নিয়েই উৎপাদিত সবজি বিক্রি করছেন তারা।

তবে কৃষককে কোনোভাবেই ঠকানো হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনাল সংলগ্ন কিচেন মার্কেটের আড়তদাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আড়তদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সাথেই শীতকালীন সবজির কদর বাড়ে। কিন্তু শুরুর দিকে সবজি পরিণত না হলেও চাহিদা থাকায় অপরিণত অবস্থায় কৃষকেরা তাদের মাঠের সবজি বিক্রি করে দেন ভাল দাম পেয়ে। তবে যখন পরিণত হয় এবং চারিদিক থেকে উৎপাদিত সবজি আসতে থাকে তখনই দাম পড়তির দিকে যায়। বর্তমান সময়েও সেই পড়তি দিকেই রয়েছে সবজির দাম। এখানে সিন্ডিকেট করে কোনো কৃষককে ঠকানো হচ্ছে না বলেও দাবি আড়তদারদের।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব চন্দ্র দে জানান, চকরিয়া উপজেলায় চলতি শীতমৌসুমে বাঁধাকপির আবাদ হয়েছে ৫১০ হেক্টর জমিতে। তদ্মধ্যে পৌরসভাতেই বেশি আবাদ হয় এই সবজির। এরপর পর্যায়ক্রমে বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল ও কাকারা ইউনিয়নেও বাঁধাকপির আবাদ হয়েছে।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছরের মতো চকরিয়া পৌরসভার এক ও দুই নম্বর ওয়ার্ডে মাতামুহুরী নদীতীরে ব্যাপক সবজির আবাদ হয়েছে। শুরুতে প্রান্তিক কৃষক ভালই দাম পেয়েছে। তবে এখন একটু দাম পড়তির দিকে থাকলেও সর্বসাকূল্যে কৃষক সবজির আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘মুক্তিপণ দিয়ে’ ফিরলেন টেকনাফের আরেক কৃষক
পরবর্তী নিবন্ধনিমতলার সেই ভাস্কর্য এখন সাগরিকার মোড়ে