কাগজের বাজারের আগুন এবার বইয়ের বাজারে

দাম ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুস্তক বিক্রেতা সমিতির

| শুক্রবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

কাগজের দাম বাড়তি ছিল গত কয়েক মাস ধরেই; এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন বছরে সব ধরনের বইয়ের দাম সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

ডলার সংকটে বিদেশ থেকে কাগজ ও কাঁচামাল (পালপ) আমদানি কমে গেছে। বাজারে কাগজের তীব্র সংকট থাকায় খাতা থেকে শুরু করে সব ধরনের বই এখনই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এখন ঘোষণা দিয়ে বইয়ের দাম বাড়ানোয় নতুন বছরে উত্তপ্ত থাকবে শিক্ষামূলক ও সহায়ক বইয়ের বাজার। চিন্তা বেড়েছে আসছে বইমেলার বই ছাপা নিয়েও। সৃজনশীল বইয়ের দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও সেই ভাবনার কথা প্রকাশকরা আগে থেকেই বলে আসছেন। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, কাগজের দাম তিনগুণ বেড়েছে, আমাদের প্রকাশকদের তো বেঁচে থাকতে হবে। কাগজের দাম এত বেড়েছে যে আমাদেরকে হয়ত ৪০০ টাকার বই ১২০০ টাকা নিতে হবে। কিন্তু সেটা করলে তো কেউ বই কিনবে না, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেক্ষেত্রে আমরা নামমাত্র দাম বাড়িয়েছি।

আমরা সব প্রকাশকদের কোনোরকমে টিকে থাকার স্বার্থে বলেছি, অন্যান্য খরচ কমিয়ে এনে ২৭ শতাংশ দাম বাড়াতে। প্রকাশকদের হয়ত কিছুই থাকবে না। অনেক প্রকাশক অসন্তুষ্ট। তবুও কিছু করার নেই। আমরা তাদের বলেছি, এই সংকট আপৎকালীন, সামনে হয়ত থাকবে না। খবর বিডিনিউজের।

কাগজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব এরই মাঝে পড়েছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষা সহায়ক বই, চাকরি প্রস্তুতির বই থেকে শুরু করে ম্যাগাজিনের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকার অন্যতম বইয়ের বাজার নীলক্ষেতের দোকানিরা জানিয়েছেন, নতুন বই আসার আগেই বেড়েছে দাম। আগামী এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে টেস্ট পেপারের দামও বেড়েছে।

রাজধানীর মিরপুরের মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেয়ের সামনের বছর এসএসসি পরীক্ষা, এখন অনেক মডেল টেস্টের বই, নোটবুক এসব কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দাম প্রায় দ্বিগুণ। বই পাওয়াও যাচ্ছে না। আগের বছরের ছাত্ররা আরও কম দামে কিনেছে। এ বছর দাম বেশি, আবার কাগজের মানও ভালো না। লেখার খাতার দামতো আগেই বেড়েছে। মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের কামাল লাইব্রেরি অ্যান্ড স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন, আগের বছরে এক সেট টেস্ট পেপারে যেখানে ২৮০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বছর কোম্পানিভেদে দাম ৪০০০ টাকার কাছাকাছি। প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি দামে ক্রেতাদের দুর্ভোগ হচ্ছে, তাদের সামলাতে আমাদেরও দুর্ভোগ হচ্ছে। ঢাকার বাইরেও পরিস্থিতি একই।

কুমিল্লা নিউ মার্কেটে বই নিকেতনের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল হান্নান বলেন, বইয়ের দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ৪০০ টাকার বই এখন ৬০০-৬৫০ টাকা। টেস্ট পেপারের দাম অনেক বেড়েছে। এ বছর প্রায় পাঁচ হাজার টাকা এক সেট টেস্ট পেপারের দাম, গতবছর ছিল তিন হাজার থেকে ৩২০০ টাকা। আর গল্প-উপন্যাসের বিক্রি অনেক কম। আগে মানুষ খাবার জোটাবে, এরপরে না এসব বই।

কাগজের চড়া বাজারে বইয়ের দামবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের ওপরও। বিভিন্ন ম্যাগাজিন, চাকরিপ্রস্তুতির বই থেকে শুরু করে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সহায়ক বইয়ের দামও বেড়ে গেছে। ঢাকার অন্যতম বইয়ের বাজার নীলক্ষেতের হক লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মোজাহার উদ্দিন বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বইয়ের দাম সর্বোচ্চ দেড়গুণ বেড়েছে, আর এই হার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। নতুন বইয়ের বিক্রি কমে গেছে।

যারা চাকরির প্রস্তুতি নেন, তারা তো বেকার, ফলে দেখা যায় তারা এখন নতুন বই না কিনে, মার্কেটে এসে পুরনো বই খুঁজছেন। আমাদেরও ব্যবসা কমে গেছে, দাম বাড়ায় লাভের অংশ তো আর বাড়েনি। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের কাছেই আর্জি জানাচ্ছেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল। বিদেশের বাজারে কাগজের দাম কমলেও দেশের বাজারে কমছে না দাবি করে তিনি বলেন, বাড়তি দামে কাগজ অর্ডার করেও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার যদি কাগজের মত পণ্য, যার সাথে আমাদের শিক্ষা ও দৈনন্দিন সবকিছু জড়িত, তাকে গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প শুল্কে কাগজ বা এর কাঁচামাল আমদানি করার সুযোগ তৈরি করে, তাহলেই কেবল সংকট সমাধান সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে অপহরণ : আস্তানায় ভারী অস্ত্র, আধুনিক ডিভাইস
পরবর্তী নিবন্ধ‘লাভের ফসল’ সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ