কাকে ভোট দেবেন, সিদ্ধান্ত নেননি ৪৯% মানুষ : বিআইজিডির জরিপ

| মঙ্গলবার , ১২ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএই প্রশ্নে বাংলাদেশের মানুষের সিদ্ধান্তহীনতা বাড়ছে বলে উঠে এসেছে এক জরিপে। গত জুলাই মাসে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত এই জরিপে ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিআইজিডির জরিপে ৩৮ শতাংশ মানুষ এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতার হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। ৫৫ শতাংশ নারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা বলেছেন, ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই হার ৪৩ শতাংশ ছিল। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘পালস সার্ভে: জুলাই ২০২৫জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

২০২৫ সালের ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশের সব জেলা থেকে মোট ৫ হাজার ৪৮৯ জনের ওপর টেলিফোনে এই জরিপ চালানো হয়। তাদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী। গ্রামের বাসিন্দা ৭৩ শতাংশ, আর ২৭ শতাংশ শহরের। খবর বিডিনিউজের।

জরিপের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত অক্টোবরে ভোটের প্রশ্নে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর যে সমর্থন ছিল, আট মাস পর তা কমে এসেছে। এই সময়ে ইসলামী দলগুলো, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পক্ষেও সমর্থন কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের তৈরি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমর্থন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেনএ প্রশ্নে ১২ শতাংশ বিএনপি, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী এবং ২ দশমিক ৮০ শতাংশ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কথা বলেছেন। গত অক্টোবরে একই প্রশ্ন করা হলে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপি, ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ জামায়াত এবং ২ শতাংশ ছাত্রদের নতুন দলকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

গত অক্টোবরে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন, নতুন জরিপে তা কমে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির সমর্থন শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। অন্যান্য ইসলামি দলের ভোট ২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে নেমেছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, তারা চায় ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চান। ১২ শতাংশ মনে করেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্যদিকে, ২৫ শতাংশ বলেছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের পর হওয়া উচিত।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনাএ প্রশ্নে ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন, নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হবে না।

বিআইজিডি বলছে, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ২০২৪ সালের অগাস্টে যে আশাবাদ ছিল, তা ধীরে ধীরে কমছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, দেশ সঠিক রাজনৈতিক পথে এগোচ্ছে বলে তারা মনে করেন। ২০২৪ সালের অক্টোবর ও অগাস্টে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫৬ শতাংশ এবং ৭১ শতাংশ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের মূল্যায়ন স্কোরও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে এসেছে। ২০২৪ সালের অগাস্টে ৭৫ শতাংশ যেখানে ইতিবাচক উত্তর দিয়েছিলেন, অক্টোবরে তা কমে ৬৮ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে আরও কমে ৬৩ শতাংশ হয়েছে। জনগণের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ‘মব ভায়োলেন্স’, যেটাকে ৮০ শতাংশ মানুষ বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন।

এছাড়া ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতারা পোশাকের কারণে হয়রানিকে বড় সমস্যা বলেছেন। ৬১ শতাংশ রাতের বেলায় চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর ৫৬ শতাংশ নারীর নিরাপত্তার অবস্থা খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিজিবির কাছে আরাকান আর্মির সদস্যের আত্মসমর্পণ
পরবর্তী নিবন্ধনগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা