কাকে কতটা ভোগাবে ট্রাম্পের শুল্ক?

বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকির ইঙ্গিত, বিদেশিদের শাস্তি দিতে গিয়ে এ শুল্কে সাজা পাচ্ছে মার্কিনিরাও

| শনিবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশের বাণিজ্য অংশীদারদের উপর ব্যাপক মাত্রায় যে ‘সম্পূরক শুল্ক’ আরোপ করেছেন, তার সদূর প্রসারী প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। আল জাজিরা লিখেছে, বেশিরভাগ দেশের পণ্যের ওপর বসানো হয়েছে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক। আর যেসব দেশ মার্কিন পণ্যের ক্ষেত্রে বেশি শুল্ক আদায় করছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, সেসব দেশের ক্ষেত্রে চাপানো হয়েছে বড় অংকের শুল্ক হার। এই শুল্ক ঘোষণা করে বিশ্ব বাজারকে রীতিমত ঝাঁকিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্ব নেতারা তার সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে, যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে, ট্রাম্প বিদেশিদের ওপর শাস্তিস্বরূপ শুল্ক চাপাচ্ছেন বলে দাবি করে আসলেও তার এ পদক্ষেপে আদতে বেশিরভাগ আমেরিকানই সাজা পাচ্ছে। হঠাৎ করেই উল্টে যাচ্ছে বাজারের পরিস্থিতি। ব্যবসায়ী নেতারা হয়ে পড়ছেন আতঙ্কিত। ভোক্তারা খবর পড়ে হয় খুবই বিভ্রান্ত, নয়ত আতঙ্কিত অথবা দুটোই হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুল্ক বাতিলের জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না এবং সংরক্ষণবাদের জন্য কোনো পথ খোলা নেই।’

নতুন শুল্কে কী ঘোষণা এসেছে : ট্রাম্প প্রায় ৬০টি দেশের ওপর সুনির্দিষ্ট ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বসিয়েছেন। এই দেশগুলো মার্কিন পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে থাকে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য। এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের ওপর যেমন বসেছে, তেমনই কম বাণিজ্য অংশীদারের ওপরও বসেছে। তাদের মধ্যে মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ই রয়েছে।

বুধবার ট্রাম্পের শুল্কের তালিকায় চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৫ শতাংশ, থইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ শুল্কারোপের কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। চলতি মাস থেকেই এই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে।

ডাচ ব্যাংক আইএনজির বৃহত্তর চীনের প্রধান অর্থনীতিবিদ লিন সং আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘যে মাত্রায় শুল্ক বাড়ানো হয়েছে তা ধারণার চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। অনেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ধারণা করছিলেন। এই ধরনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপে সম্ভবত বড় খেলোয়াড়রা কিছু প্রতিশোধের ঝুঁকি নেবে, যদিও ছোট দেশগুলো কম হারের জন্য চেষ্টা ও আলোচনার পথ বেছে নিতে পারে।’

ইইউতেও ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যকে এখন ১০ শতাংশের ভিত্তি শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। এ সর্বনিম্ন স্তরের শুল্ক যাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি দেশ হল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

কানাডা ও মেক্সিকোতে এখন নতুন করে কোনো শুল্ক বসবে না। ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই দেশ দুটিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। তাদের যেসব পণ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, সেগুলো এই আদেশের বাইরে থাকবে।

অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক কর্মসূচি বাঁকা চোখে দেখছেন কিংবা কোনওভাবে একে অর্থবহ করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনও বিশ্বে ঈর্ষণীয়। তবুও ট্রাম্পের বিশ্বাস, তার দেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর অন্যায় বাণিজ্য চর্চার শিকার হচ্ছে। তাই বিদেশিদেরকে সাজা দিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করতে ট্রাম্প শুল্ককেই হাতিয়ার করেছেন। এই নীতিতে তিনি অনড়। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দায় পড়লেও তার কোনও পরোয়া নেই।

ট্রাম্পের দাবি শুল্ক আরোপ হলে বিদেশের অর্থনীতি ধাক্কা খাবে। তার এই কথাটি ভুল নয়। কিন্তু তাতে যে তার নিজ দেশের নাগরিকরাও সাজা ভুগবে সেই সত্যটিকে তিনি এখন পর্যন্ত গা ঝাড়া দিয়ে এসেছেন। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার জেরে এরই মধ্যে ধাক্কা খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। বুধবার ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করার পর মার্কিন শেয়ার বাজারে বড় ধস নেমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড মহামারীর পর এত বড় ধস আর দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালের কোভিড মহামারীর পর সবচেয়ে বড় পতন এটি। একইদিন ডাও জোন্স সূচক ৪ শতাংশ কমেছে এবং নাসডাক প্রায় ৬ শতাংশ পড়ে গেছে। ২০২০ সালের জুনে কোভিড সংকটে খারাপ সময় পার করার পর এবারের সবচেয়ে খারাপ এই দিনে বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ার বাজার।

বুধবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, আমদানিকৃত পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বাড়বে এবং দেশীয় শিল্পে নতুন গতি আসবে। যদিও বিশ্লেষকদের বক্তব্য, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে এবং প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশ্ব বাণিজ্যের ধারা নতুন করে তৈরিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ট্রাম্প অবশ্য এসব নিয়ে চিন্তিত নন। শেয়ার বাজারে ধস নিয়ে উদ্বেগও তিনি নাকচ করেছেন। তার কথায়, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম বাজার শক্তিশালী আছে। স্যোশাল মিডিয়ায় অনুসারীদেরকে তিনি বলেছেন, আমরা হারতে পারি না। আশার বার্তা দিয়ে ট্রাম্প বলছেন, অর্থনীতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া গাড়ির উপর শুল্ক আরোপ হওয়ায় বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা অন্যান্য দেশে গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ডলারের মূল্য হ্রাস পাওয়াও চিন্তায় ফেলছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের। আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতিতে পড়ার আশঙ্কায় আছে তারা। তবে দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে রূপক অর্থে ট্রাম্প বলেছেন, ‘রোগী খুবই অসুস্থ ছিল। অস্ত্রোপচার হয়েছে। রোগী এখন সুস্থ হয়ে উঠছে। সে আরও মজবুত হবে। আরও ভাল হয়ে উঠবে। আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে আরও প্রাণচ্ছোল হবে।’

শাস্তি নাকি উপহার, ৫ বৃহৎ অর্থনীতি যেভাবে দেখছে : ট্রাম্প বুধবার শত্রুমিত্রসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্য নতুন যে শুল্ক আরোপ করেছেন বিশ্বজুড়ে শিগগিরই তার মারাত্মক প্রভাব দেখা যাবে বলে অনেকে মনে করছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রের সিংহভাগ মিত্রই ট্রাম্পের শুল্কের নিন্দা জানালেও চীনের নেতারা একে উপহার হিসেবেও দেখতে পারেন। বিশ্বের বড় পাঁচ অর্থনীতি কীভাবে দেখছে এই শুল্ককে, তাদের ওপর এর তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবই বা কেমন হতে পারেবিবিসির প্রতিনিধিরা তাই তুলে আনার চেষ্টা করেছেন।

ইইউভুক্ত সকল দেশের হয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েন আমদানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ব্যবস্থাপনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এর পরিণতি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ভোগাবে। তার কমিশন ইইউর ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে। যদিও জোটভুক্ত কয়েকটি দেশের কিছু কিছু খাতের ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের পদক্ষেপে বেশ বিপাকেই পড়তে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে জার্মানির গাড়ি শিল্প, ইতালির বিলাসদ্রব্য, ফ্রান্সের ওয়াইন ও শ্যাম্পেন উৎপাদকরা। পরিস্থিতি দেখে বৃহস্পতিবার রাতেই ফরাসী ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডাকেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশ্বের একক বৃহত্তম বাজার হওয়ায় অ্যাপল, মেটার মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ নানান মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবায় পাল্টা শুল্ক বসিয়ে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে, কিন্তু তাদের আপাত লক্ষ্য হচ্ছেউত্তেজনা না বাড়িয়ে ট্রাম্পকে আলোচনায় বসতে রাজি করানো। যেমনটা বুধবার রাতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন। তার মতে, শুল্ক আরোপ ‘ভুল’, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে সম্ভব সবকিছু করার চেষ্টা করা হবে। বুধবার ট্রাম্প সম্পূরক শুল্ক বসানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্য ঢুকতে এখন ৫৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। বিপুল এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করা চীনা কোম্পানিগুলোকে যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে তাতে তো কোনো সন্দেহই নেই। বেইজিংয়ের পাল্টা পদক্ষেপও প্রায় দেড়শ কোটি ভোক্তার বিরাট মার্কেটে পণ্য পৌঁছাতে চেষ্টা করা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে একদিক থেকে দেখলে, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের নেওয়া নানান পদক্ষেপ আদতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য এক ধরনের ‘উপহার’। শি বিশ্বের কাছে তার দেশকে উপস্থাপন করতে চাইছেনমুক্ত বাণিজ্যের রক্ষক, বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে।

গত সপ্তাহেও চীনের এই সর্বোচ্চ নেতা আন্তর্জাতিক কর্পোরেশনগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বসেছিলেন, যার মধ্যে ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠানও আছে। এসবই যে বার্তা দেয়, তা হলোট্রাম্পের অধীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্র মানেই বিশৃঙ্খলা, বাণিজ্য ধ্বংস, জাতীয় স্বার্থ; অন্যদিকে শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন চীন মানে স্থিতিশীলতা, মুক্ত বাণিজ্য আর বৈশ্বিক সহযোগিতা। চীনের সরকার এরই মধ্যে তাদের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম খাতকে ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া নতুন শুল্কের কড়া সমালোচনা করতে লাগিয়ে দিয়েছে।

বিশ্বের অবস্থান সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ধারণা নিয়ে মানুষজন বিদ্রুপ করতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেট্রাম্প যতবারই এ ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, ততবারই শির বক্তব্য আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, চীনের নেতারা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন। সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তাও হয়তো অনেক দেশ ও কোম্পানিকে চীনের দিকে ঠেলে দেবে, যুক্তরাষ্ট্র তখন সরে যাবে আরও দূরে।

এদিকে হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নতুন শুল্ক ব্যবস্থাপনা ঘোষণা করার পর যুক্তরাজ্য সরকারের অনেককে ফুরফুরে মেজাজে দেখা যাচ্ছে। এক কর্মকর্তার কথা শুনে মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের দৃষ্টিতে ‘খারাপ শিবিরে না থেকে ভালো শিবিরে’ থাকায় তারা খানিক স্বস্তিতেও আছেন। যদিও এই স্বস্তি কেন, আর কী কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করা দরকার, তা নিয়ে আগেভাগে কিছু বলতেও পারছেন না তারা। তারা বলছেন, আমরা কেবল জানি, যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি পণ্যে এখন ১০ শতাংশ শুল্ক বসবে। এই খবর ব্রিটিশ মন্ত্রীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করলেও তারা যে খুব একটা আনন্দে আছেন, তাও নয়। যুক্তরাজ্যের ওপর যে শুল্ক বসেছে তার প্রভাব তো আছেই, অংশীদারদের ওপর যে শুল্ক বসেছে তাও চাকরি, বিভিন্ন খাত ও শিল্প এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবাহে আসছে সপ্তাহ, মাস ও বছরগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। এটা বড়সড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে, বলেছে যুক্তরাজ্য সরকারের একটি সূত্র।

এর মধ্যেই গাড়ি শিল্পে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব নিয়ে বিরাট উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাও চলছে। যুক্তরাজ্যের চার মধ্যস্থতাকারী এখন তাদের মার্কিন কাউন্টারপার্টদের সঙ্গে ‘নিবিড়’ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সমঝোতা হলে এরা ওয়াশিংটনে উড়াল দেবেন বলেও বিবিসির প্রতিবেদককে জানানো হয়েছে।

অপরদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্কে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলো। মার্কিনিদের এখন ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যে গুণতে হবে ৪৬ শতাংশ শুল্ক, কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ। সে তুলনায় ভারতের পণ্যে শুল্ক অনেক কম আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও যে ২৬ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসেছে তাও কম নয়, এবং এটি ‘শ্রমঘন রপ্তানি পণ্যে’ বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এশিয়া ডিকোডেডের প্রিয়াঙ্কা কিশোর। প্রবৃদ্ধি যখন থমকে আছে, তখন এই শুল্ক অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও মোট দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে, বলেছেন তিনি। তবে ট্রাম্পের শুল্কে ভারতের ইলেকট্রনিক্স পণ্য লাভবান হতে পারে, কারণ এর প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর ওপর মার্কিন শুল্কের পরিমাণ আরও বেশি, যে কারণে ওই দেশগুলো এখন হয়তো তাদের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের জন্য অন্য বাজার খুঁজবে। কানাডা, মেক্সিকো বা ইইউর মতো ভারত এখন পর্যন্ত চড়া গলায় ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করেনি; তারা উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এরপরও নয়া দিল্লি বুধবার ট্রাম্পের দেওয়া শুল্কের পাল্টায় নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এদিকে ট্রাম্পের শুল্কে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলো। কারণ, ট্রাম্প তার পাল্টা শুল্ক থেকে ওষুধ খাতকে ছাড় দিয়েছেন।

ট্রাম্পের বুধবারের শুল্ক আফ্রিকার ডজনেরও বেশি দেশকে নতুন করে বিপর্যয়ে ফেলবে। নতুন মার্কিন শুল্ক নীতিতে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো পণ্য ঢুকতে গেলে দেওয়া লাগবে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, লেসোথোর ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি, ৫০ শতাংশ। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যাওয়ায় এমনিতেই আফ্রিকার অনেক দেশ ভুগছিল, তার মধ্যে এ ধাক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মহাদেশটির বড় অর্থনীতির অনেক দেশ, যেমন নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ছিল। ওয়াশিংটনের নতুন শুল্ক ব্যবস্থাপনা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনকার অর্থনৈতিক সম্পর্ককে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ট্রাম্প রেখেছেন তার ‘বাজে অপরাধী’ দেশের দীর্ঘ তালিকায়; যাদেরকে ‘অন্যায্য বাণিজ্য নীতির খেসারতে’ বেশি শুল্ক দিতে হবে, বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুবিধাবঞ্চিতদের সাথে বিজয়-৭১ এর ঈদ উদযাপন
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারা পিএবি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে মানববন্ধন