বায়েজিদে কথিত বন্দুকযুদ্ধে জয়নাল আবেদিন (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর মোবারক আলী, সাবেক ওসি আতাউর রহমানসহ ১৩ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ১২/১৫ জনকে আসামি করে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন নিহত জয়নালের মা জোহরা বেগম।
এসময় আদালত মামলাটির তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দিয়ে আগামী ২৩ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় কাউন্সিলর মোবারক আলীর পাশাপাশি তার পিএস শামসুকে আসামি করা হয়েছে। শামসুকে এই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ হলেন- বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি আতাউর রহমান খন্দকার (বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ওসি), এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম হোসেন, এসআই নোমান, এসআই দীপঙ্কর রায় ও কনস্টেবল মাসুদ রানা। বাকী আসামিদের মধ্যে রয়েছে পুলিশের সোর্স আলাউদ্দিন, ফোরকান, ইলিয়াস, মিঠু কুমার দে, হারুন ও লাল সুমন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ১২/১৫জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৬৪/৩৪২/৩৪/৫০৬ দন্ডবিধি ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গতবছর ১ আগস্ট রাত ১১টায় মামলার আসামি কাউন্সিলর মোবারক আলীর পিএস শামসু, ইলিয়াস ও মিঠু কুমার দে জোহরা বেগমের বাসায় আসেন। এ সময় আসামিরা আমিন জুট মিলের মারামারিতে জয়নাল ছিল কিনা তাঁর কাছে জানতে চায়। এসময় জয়নাল মারামারিতে না থাকার পাশাপাশি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানান জোহরা বেগম। পরে আসামিরা জয়নালের কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে যায়। রাত আনুমানিক ৩টায় দুইটি মোটর সাইকেল, ১টি মাইক্রো ও ৩টি পুলিশের গাড়িতে করে ২৫/৩০জন পুলিশ জোহরা বেগমের বাসা ঘিরে ফেলে। পুলিশ দরজা ধাক্কা দিলে জোহরা বেগমের স্বামী দরজা খুলে দেয়। এসময় বাসার ভেতর থেকে জোর করে জয়নালকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন জোহরা বেগম বায়েজিদ থানায় গিয়ে তার ছেলে জয়নালের খোঁজ করেন। এসময় পুলিশের লোকজন জয়নালের ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জোহরা বেগমকে জানায়। পরে জয়নালের মা জোহরা বেগম কাউন্সিলর মোবারক আলীর পিএস শামসুকে ফোন করেন। এসময় শামসু কিছু টাকা নিয়ে তার অফিসে আসার জন্য জোহরা বেগমকে বলেন। এরপর মামলার বাদিনী জোহরা বেগম ৫ হাজার টাকা নিয়ে কাউন্সিলর অফিসে আসলে শামসু ওই টাকা নিয়ে থানায় যাওয়ার জন্য বলেন। তিন ঘন্টা পর আসামিরা জয়নাল থানার ভেতর নেই বলে জোহরা বেগমকে চলে যেতে বলে। পরবর্তীতে ছেলের খোঁজে আসামিদের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বাদিনী জোহরা বেগমকে কাউন্সিলর অফিসে আসার জন্য বলে আসামিরা। বেলা ৩টা নাগাদ বাদিনী সেখানে গেলে কাউন্সিলর অফিসের একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর রাত ৯টায় বাদিনী জোহরা বেগমকে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জোহরা বাসায় ফিরে আসেন। পরদিন রাত তিনটায় বাদিনীর বাসায় তিনজন অজ্ঞাত লোক এসে জয়নালের জন্য রক্ত প্রয়োজন বলে তাকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলে। এসময় বাদিনী জোহরা বেগম হাসপাতালে গেলে সেখানে তাঁর ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এসময় জয়নালের মা জোহরা বেগম থানায় মামলা করতে গেলে তাকে আসামিরা নানা ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জানা গেছে, বায়েজিদ আমিন জুট মিল এলাকায় মারামারির মামলার এক আসামির সাথে নামের মিলের কারণে টেঙটাইল ভোকেশনালের ছাত্র জয়নাল আবেদীনকে ওইদিন পুলিশ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে জয়নাল কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরে ওই মারামারি মামলার চার্জশিট থেকে জয়নালের নাম বাদ দেয়া হয়। অথচ ওই মামলার মূল আসামি জয়নাল জীবিত রয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গণির আদালতে ওই মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া জয়নালের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে আগামী ১৩ অক্টোবর আদালত শুনানি করবেন। এ ঘটনায় পুলিশের করা একটি তদন্তে মামলার চার্জশিট থেকে মূল আসামি জয়নালকে বাদ দেয়ার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের তদন্তে বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক ও মামলার আসামি হিসেবে থাকা যুবক দু’জনেরই নামের মিল রয়েছে। কিন্তু তাদের পিতার নাম ও ঠিকানা ভিন্ন পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একটি মারামারির মামলায় পরের বছর ১ সেপ্টেম্বর ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থী জয়নাল নিহত হয়। বন্দুকযুদ্ধে নিহত জয়নাল বায়েজিদ থানাধীন আমিন জুট মিল সংলগ্ন আতুরার ডিপো এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।