এবার চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা তাদের পছন্দ মত দামে চামড়া কিনতে পারায় যেমন খুশি-তেমনি তাদেরকে টার্গেট পূরণ হওয়ায় তাতেও খুশি। তবে দামে ও টার্গেটে আড়তদাররা খুশি হলেও কাঙ্খিত দাম না পেয়ে কোরবানিদাতা বিনামূল্যে চামড়া স্থানীয় এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছে।
আড়তদারদের দর নির্ধারণের পরও দাম পায়নি বলে অভিযোগ কোরবানিদাতাদের। আকারভেদে গরুর চামড়া ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ কিংবা ২০০ টাকা আর ছাগলের চামড়া ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামে এবার সমিতিভুক্ত ১১২ জন আড়তদারের মধ্যে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেছেন মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ জনের মতো। সমিতির বাইরে শহরে আরো ১৫-২০জনের মতো চামড়া ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেছেন। গ্রামেও সংগ্রহ করেছেন আরো ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো।
আজ বিকালে (রবিবার ১০ জুলাই) নগরীর আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট মোড়, দেওয়ান হাট, চৌমুহনী, হালিশহর, বউবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অলিগলি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা স্তূপ করে রেখেছে। সেখান থেকে পিক-আপের, ভ্যানে করে বিবিরহাট আড়ত গুলোতে নেয়া হচ্ছে এবং কিছু চামড়া চৌমুহনী এলাকার কিছু আড়তে নেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে জানান, এখন পর্যন্ত( রবিবার রাত সাড়ে ৮ টায়) আমাদের কাছে ১ লাখের উপরে চামড়া এসেছে। আমরা লবণ দিয়েছি। আরো আসবে।
আজকে আসবে-কালকে আসবে। সব মিলে নগরীতে আমাদের দেড় থেকে দুই লাখের যে টার্গেট সেটা পূরণ হবে। কালকেও অনেক চামড়া আসবে। গ্রামে ৪০ থেকে ৫০জন চামড়া ব্যবসায়ী আছেন, তারা গ্রামে-গঞ্জ থেকে যে সব চামড়া সংগ্রহ করেছে তারা সেখানে লবন দিয়ে রেখেছে। তারা আরো ২ লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করবে। সব মিলে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি আমরা।
দামের ব্যাপারে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামে আমরা চামড়া কিনছি। কোথাও কোন চামড়া নষ্ট হয়নি। এবার কোথাও কোন চামড়া ফেলে দেয়ার খবরও নেই। সব চামড়া আমাদের কাছে আসছে। ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন জায়গায়ও লবন দিয়ে রেখেছে। পরে সময় সুযোগ মত তারা বিক্রি করবে।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যাানরি মালিকারা ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ৪০ থেকে ৪৪ টাকায়। আর ঢাকার জন্য নির্ধারণ করেছেন ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির ব্যবসায়ীদের দাবি-তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনছপন। যদি ট্যানারি মালিকরা তাদের লবণ দেয়া চামড়ার ন্যায্য দাম না দেন তাহলে শুধু লোকসান নয়, অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করেছেন তারা।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির নেতারা জানান, আগে প্রতিবছরই পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকতো। লবণের দাম ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে চামড়া খাতে সংকট কাটছে না। ফলে দিনদিন কমেছে লক্ষ্যমাত্রাও।
চামড়া খাতের সংকট প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আড়তদাররা জানান, গতবছর ঢাকার এতগুলো ট্যানারির মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া নেয়নি। ছোটখাটো দু’চারটা ট্যানারির প্রতিনিধি এসে সামান্য কিছু চামড়া কিনেছে। ট্যানারির মালিকদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন চামড়া কেনার সময় ন্যায্য দামটুকু আমাদের দেন।