চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকার প্রথম আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের হিসাব নিয়ে নয় ছয় করার অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং মসজিদটি ইমাম মাওলানা আবু আহমদ আহাজারি ও খাদেম রিদোয়ানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে ১৫ মে (বুধবার) নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক আহসান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
তিনি বলেন, ঘটনার সত্যতা আছে। মসজিদ হিসাব নিয়ে নয় ছয় হয়েছে এটা ঠিক। টাকা জমা দিয়ে জমা রশিদ আমাদের কাছে জমা দেননি। ওখানে টাকা জমা দিচ্ছে ইমান ও খাদেমের কাছে একটা রেজিস্ট্রার ছিল সেটার সাথে ব্যাংক হিসাবের গরমিল ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি চট্টগ্রমের বাহিরে ছিলাম, আজকে আসছি। তদন্ত রিপোর্টটা এখনো দেয়নি। রিপোর্ট আসার পর জনতে পারবেন কত টাকার গরমিল হয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট আসার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারো চাকরি থাকবে না। মসজিদের টাকা মসজিদকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
মসজিদের টাকার হিসাব নিয়ে নয় ছয় করার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের পরিচালক বলেন, এইটি খুবই খারাপ কাজ না? মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করবে, অনিয়ম করবে এটা বড় অপরাধ। তদন্ত রিপোর্ট আসুক জেলা প্রশাসককে জানানো হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে কথা বলার এক পর্যায়ে এ ব্যাপারে পত্রিকায় খবর প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধও করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক আহসান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
অভিযোগের ব্যাপারে কল্পলোক মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু আহমদ আহাজারি কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অফিসকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি। অফিস তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।
জানা যায়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আবাসিক প্রকল্প নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোকে নির্মিত হয়েছে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন প্রথম মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
সিডিএর কল্পলোক আবাসিক প্রকল্পে এই প্রথম নগরীতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মডেল মসজিদ। এ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সে লাইব্রেরি, গবেষণা কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশু শিক্ষা কার্যক্রম এবং পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজ কক্ষ, মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি পর্যটকদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে।
চারতলা বিশিষ্ট মসজিদটি রয়েছে হজযাত্রী ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও থাকবে মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা। আধুনিক কারুকাজে নির্মিত এ মসজিদটি হবে ধর্মীয় কার্যাদীর পীঠস্থান। মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে একসাথে ১২৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। যেটি বর্তমান সরকারের বড় অর্জন।
বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই আলোকে ২০১৫ সালে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীষক প্রকল্প হাতে নেয়।