প্রেম মানুষের জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং অপরিহার্য অংশ। কিন্তু সব প্রেমই কি বাস্তব হয়? অনেক সময় প্রেম তার রূপ নেয় কল্পনার জগতে, যেখানে কোনো বাস্তব সম্পর্কের জটিলতা নেই, নেই কোনো হারানোর ভয়। এই কল্পনার প্রেম নিয়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রচলিত। প্রেম, বিশেষত যখন তা কেবল কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তার বিভিন্ন দিক থাকে।
প্রশ্ন হলো, কল্পনায় প্রেম বা ভালোবাসা কি কোনো দোষের? বিশেষত যখন কোনো মেয়ে এমনটা ভাবে, তাতে তার বা সমাজের কি কোনো ক্ষতি হয়?
মানুষের মন সবসময় একাকী থাকে না। তাঁর মন কিছু না কিছু ভাবনার জন্ম দেয়। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন হয়।
যখন বাস্তবে কেউ মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পায় না, তখন অবচেতনে মন এক কল্পিত মানুষ বা পরিস্থিতির আশ্রয় নেয়। এই কল্পনার প্রেম হলো এক ধরনের ‘এস্কেপিজম’ বা বাস্তবতা থেকে পালানো। এখানে একজন নারী তার মনের মতো করে একটি পুরুষ বা সম্পর্ককে গড়ে তোলে, যেখানে সবকিছু নিখুঁত। এই নিখুঁত সম্পর্ক তাকে শান্তি দেয়, অনুপ্রেরণা যোগায়।
এটি এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেখানে মানুষ তার জীবনের কঠিন বাস্তবতা, দুঃখ, চাপ, বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পেতে কোনো কাল্পনিক জগতে নিজেকে নিমজ্জিত করে। এটি হতে পারে কোনো শখ, বই পড়া, সিনেমা দেখা, গেম খেলা, বা এমনকি দিবাস্বপ্ন দেখার মতো কোনো কিছু।
বাস্তব জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে একটি কাল্পনিক বা ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করা।
প্রায়শই মানুষ কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি বা একাকীত্ব থেকে বাঁচতে নিজের মনে একটি সুন্দর বা নিখুঁত কল্পনার জগত তৈরি করে।
বাস্তব সম্পর্কের মধ্যে ব্রেকআপ, বিশ্বাসঘাতকতা বা কষ্ট পাওয়ার ভয় থাকে। কল্পনার মধ্যে এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বাস্তব জীবনে হয়তো একজন নারী তার নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী সম্পর্ক বা ভালোবাসা পায় না। কল্পনার মধ্যে সে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে নেয়। এই কল্পনার প্রেম অনেক সময় একজন মানুষকে সৃজনশীল করে তোলে। সে কবিতা লেখে, গান তৈরি করে, বা গল্পের চরিত্র নিয়ে ভাবে। এটি তার মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
আমাদের সমাজের মেয়েদের এমনটা ভাবা, সমাজের চোখে অনেক সময় এমন আচরণকে অস্বাভাবিক মনে করা হয়। তবে যদি গভীরভাবে চিন্তা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে এটি কেবল একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যা প্রায়শই কোনো ক্ষতি করে না, বরং কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। যখন একজন নারী কল্পনার মধ্যে একটি সুন্দর জগত তৈরি করে, তখন সে একাকীত্ব বা বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পায়। এটি তার মন, মানসিকতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। কল্পনার মধ্যে একজন নারী তার নিজের চাওয়া–পাওয়া, ইচ্ছে–অনিচ্ছেগুলো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। সে জানতে পারে সে আসলে কেমন সম্পর্ক চায় এবং কেমন পুরুষ তার সঙ্গী হতে পারে। এটি তাকে বাস্তব জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করতে পারে। আমাদের সমাজ মেয়েদের উপর বিয়ের জন্য, সম্পর্ক তৈরির জন্য অনেক চাপ সৃষ্টি করে। কল্পনার জগতে একজন নারী সেই চাপ থেকে সাময়িক মুক্তি পায় এবং নিজের মতো করে বাঁচতে পারে।
তবে এর কিছু খারাপ দিকও আছে, যেমন, যদি কোনো নারী কল্পনার জগতে এতটাই ডুবে যায় যে বাস্তব জীবনের সম্পর্ক এবং সুযোগগুলোকে অবহেলা করতে শুরু করে, তখন এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি তাকে বাস্তব থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিতে পারে এবং জীবনের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করতে পারে। যখন তার কল্পনায় চাওয়া–পাওয়ার সাথে মিল খুঁজে পায় না। তখন ভীষণভাবে মুষড়ে পড়ে।
যদি কল্পনার প্রেম কোনো নারীকে তার জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন না করে দেয়, বরং তাকে আরও বেশি ইতিবাচক এবং আশাবাদী করে তোলে, তাহলে এটি মোটেও দোষের নয়। এটি বরং এক ধরনের সুস্থ মানসিক প্রক্রিয়া।
আসলে প্রেম বা ভালোবাসা, তা বাস্তব হোক বা কাল্পনিক, সবকিছুরই ভিত্তি হলো মানুষের সুস্থ মানসিকতা এবং খুশি থাকা। কবে, কাকে ভালো লেগে যায় বলা যায় না। হয়তো তাঁকে বলবার সাহস করতে পারছে না ভয়ে, লজ্জায়। তাঁকে মনের কল্পনায় জায়গা করে দেয়।
যদি কল্পনার প্রেম একজন নারীকে কষ্ট না দেয়, বরং তাকে আনন্দ দেয়, তাহলে এটি কোনো দোষের হতে পারে না। বরং আমাদের উচিত এই বিষয়গুলোকে আরও বেশি খোলা মনে গ্রহণ করা এবং বুঝতে চেষ্টা করা।
কল্পনার প্রেম হলো এক ধরনের নীরব ভাষা, যা মানুষের মনের গভীরের কথাগুলো বলা। এটি মনের এক সৃজনশীল প্রকাশ। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সাময়িকভাবে মনকে শান্তি দেয় এবং নতুন করে কাজ করার শক্তি যোগায়।












