কলাতলীতে সড়কে যানবাহন দূরের কথা, হেঁটে চলাও কষ্টকর

পর্যটকরা ভোগান্তিতে, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | মঙ্গলবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র কলাতলী। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক হোটেলমোটেল। যেখানে থাকেন দেশিবিদেশি পর্যটকরা। কিন্তু এখনো এই পর্যটন জোনের কয়েকটি সড়ক দেখলে মনে হবে এটি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। দেখে কোনোভাবেই মনে হবে না একটি আধুনিক পর্যটন নগরীর সড়ক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কলাতলির জিয়া গেস্ট হাউজ থেকে দক্ষিণে অভ্যন্তরের ১৬০ মিটার সড়ক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কগুলো দীর্ঘ দুই দশক ধরে অবহেলায় পড়ে আছে। এক সময় কংক্রিটের গুড়ি ফেলে কোনোরকম চলাচলের উপযোগী করলেও বর্তমানে এসব সড়কের এমন বেহাল দশা হয়েছে যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের। আর পর্যটন মৌসুমে দীর্ঘ ২ বছরে অন্তত শত কোটি টাকার লোকসান গুণেছে ওই এলাকার ১৮টি হোটেল।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসাযীরা অভিযোগ করেছেন, কক্সবাজার পৌরসভার উদাসীনতায় দীর্ঘদিন সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ না করায় এসব সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে আছে ময়লাযুক্ত নালার পানি। এছাড়া সড়কজুড়ে এবড়োখেবড়ো অবস্থায় বিপজ্জনকভাবে পড়ে আছে বড় বড় ইটের খোয়া। যানবাহন চলতে গেলে তীব্র ঝাঁকুনি দেয়। এতে ব্যথায় কুঁকড়ে যায় যাত্রীরা। অন্যদিকে হাঁটতে গেলে কাঁদাপানি আর ইটের খোয়ারিতে পা রাখা যায় না। বৃষ্টির সময় জমে থাকা পানি এবং রোদের সময় ধুলোবালির জন্য হাঁটাচলা করা যায় না। প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে অনেক পর্যটক এসব এলাকার হোটেলমোটেলে উঠতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এর প্রভাব পড়ছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। ক্ষতির মুখে পড়েছেন অসংখ্য উদ্যোক্তা। তেমনিভাবে পর্যটকরাও এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা আবদুল মতলব বলেন, এই এলাকার হোটেলে উঠে সড়ক নিয়ে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনলাইনে হোটেল বুকিং করে বিড়ম্বনায় পড়ে যাই। আরেক পর্যটক জামসেদ হোসেন বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র শহরে এসে এমন রাস্তা দেখতে হবে, ভাবিনি। এটি সত্যিই লজ্জাজনক।

কঙবাজার পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী শিমুল চন্দ্র দাস জানান, উক্ত প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প। এটি সিএলডিআরআর প্রজেক্ট নামে পরিচিত। কোভিড এর পরে বাংলাদেশকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কঙবাজার পৌরসভাকে দায়িত্ব প্রদান করে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং কঙবাজার পৌরসভার উদ্যোগে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হচ্ছে। বান্দরবানের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত রমজানের আগে শুরু হওয়া ড্রেন নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি; চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন শীতকালীন পর্যটন মৌসুমেও কোনো উন্নতি দেখা যাবে না বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা!

অভিযোগ উঠেছে, ড্রেনেজ এর উভয় পাশের কাজ এত নিম্নমানের হয়েছে যে কোনো মুহূর্তে গাইড ওয়ালগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সিমেন্ট ও কংকর। ড্রেনেজ এর তলা (বেস) ঢালায় এ ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। কাজের গতি এতই কম যে ১২০ মিটার কাজ শেষ করতে আরো ২ বছর লেগে যাওয়ার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী ও পর্যটক দু’পক্ষেরই এক দাবিজীবিকা ও পর্যটন শিল্প বাঁচাতে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। এ ব্যাপারে কঙবাজার হোটেলমোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটন শহর কলাতলীতে থাকেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। অথচ এই এলাকার সড়কের এমন ভঙ্গুর দশা। এ যেন বাত্তির নিচে অন্ধকার। আমরা বহু বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে বলে আসছি। কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে সড়কটি বাস্তবায়নে দেখভালে নিয়োজিত কঙবাজার পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রুমেল বড়ুয়াকে কাজের অগ্রগতি ও বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে এম৭৫১এইচএল হেভি লোড ট্রাক টায়ার উদ্বোধন