জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের ক্যাম্পেইন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রতি ১০ মিনিটে এক নারী তার সঙ্গী বা পারিবারিক সদস্যের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন নারী জীবনে কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার হচ্ছে, যার মধ্যে কন্যাশিশু এবং কিশোরীরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আনুমানিক ৭৩৬ মিলিয়ন নারী, যা বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ, কমপক্ষে একবার শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন তারা মানসিকভাবে হতাশা, উদ্বেগ, অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ, যৌন সংক্রমণ এবং এইচআইভির মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ–বিলসের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক উক্ত সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা নারী কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিইউসি কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু। প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমিক দলের বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন নাসরিন আক্তার, রেখা বড়ুয়া, লুতফুন্নাহার সোনিয়া, শাহানা আক্তার, আলতাজ বেগম, শ ম জামাল উদ্দিন, নুরুল আবসার, কাজী আনোয়ারুল হক হুনি, আবু আহমেদ মিয়া, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, মোহাম্মদ হানিফ, আরিয়েল লেনিন।
প্রধান অতিথি বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র বাংলাদেশেও দৃশ্যমান, তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো খারাপ। নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই নারীর উপর সহিংসতা কমানোর মূল উপায়। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে যাবে। অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশে পোশাক খাত এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী নিয়োগ রয়েছে। তবে এই দুই খাতে নারী শ্রমিকরা শারীরিক এবং যৌন হয়রানির শিকার হন। শ্রম বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক কলকারখানা এবং শিল্প– সেবা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও এটি এখনও কার্যকর হয়নি।বক্তারা দাবি করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলিতে অন্তত দুটি বাইরের সদস্যসহ যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন, যাতে সহিংসতা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই নারী, কন্যা ও কিশোরীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।