কলকাতায় আটকা জাহাজডুবির শিকার ১৫ বাংলাদেশি নাবিক

ফেসবুক লাইভে দুর্দশার বর্ণনা

| শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

একটি ভিডিও বুধবার রাত থেকে বাংলাদেশের অনেকেই শেয়ার করছেন ফেসবুক ও ইউটিউবে। যাতে দেখা যাচ্ছে একটা ছোট ঘরে রঙ চটে যাওয়া দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পনের জনের মতো মানুষ। তাদের মধ্যে একজন দুর্দশার বর্ণনা করছেন। একপর্যায়ে তারা সবাই একসাথে বলে ওঠেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমরা দেশে ফিরতে চাই’। বুধবার রাত আটটা নাগাদ কলকাতায় আটকে পড়া পনের জন নাবিককে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন মেরিন ট্রাস্ট ওয়ান নামের জাহাজের ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সাল। সেখানে তিনি বলছিলেন, ‘গত ২০ মার্চ আমরা চট্টগ্রাম থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ান দেই। এরপর তেইশে মার্চ আমরা এসে এখানে পৌঁছাই। কিন্তু আনফরচুনেটলি ২৪ মার্চ আমাদের জাহাজটি কলকাতা পোর্টে ডুবে যায়। এরপর কলকাতা পোর্ট অথরিটি আমাদের স্থানীয় একটা হোস্টেলে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে। এরপর থেকে এই হোটেলেই আমরা দীর্ঘ এক মাস ধরে আছি।’ খবর বিবিসি বাংলার। সাড়ে তিন মিনিটের লাইভে আরো বলা হয়েছে, ‘আমাদের পাসপোর্টগুলো এখানকার লোকাল শিপিং এজেন্ট নিয়ে গেছে। পুলিশি ঘেরাও দিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছে। খাদ্য সরবরাহ যেকোনো সময় বন্ধ করে দেবে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই। আমাদেরকে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আপনারা সাহায্য করুন।’
ভিডিওতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। গত ২৪ মার্চ যখন মেরিন ট্রাস্ট ওয়ান নামের জাহাজটি ডুবে যায় তখন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানি থেকে আমাদের বলা হয়েছে সাত থেকে দশদিন লাগবে, জাহাজটা উদ্ধার করে ওটা নিয়েই আমরা ফেরত আসবো। দেরি দেখেও তাই আমরা এতদিন কিছু বলছিলাম না। কিন্তু ২৪ এপ্রিল আমাদের কোম্পানি জাহাজটি হঠাৎ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এর ফলে যেটা হয়েছে জাহাজের ক্রুর সাথে তাদের আর কোন সম্পর্ক থাকে না। এখন আর কোম্পানিটির তরফ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে না। তারা আমাদের বলে দিয়েছে তোমরা নিজেরা চেষ্টা কর।

কলকাতার এই যাত্রাটি ছিল চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর চট্টগ্রামের বাসিন্দা ফাহিম ফয়সালের প্রথম যাত্রা। তিনি জানিয়েছেন, নাবিকদের পরিচয়পত্র, অন্যান্য চালানপত্র সবকিছু জাহাজের সাথে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, কি কারণে আমাদের মর্টগেজ বানিয়ে এটা করা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। কোম্পানির কাজটাও এখন চলে গেল। তার মানে বেতনও নেই। আমাদেরও পরিবার আছে। জাহাজ নিয়ে জটিলতা কয়মাস লাগবে আমরা তো সেটা জানি না। ততদিন কি আমরা এখানে বন্দি অবস্থায় থাকবো ?
যা বলছে বাংলাদেশ দূতাবাস : এই নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে কি করা হচ্ছে এ বিষয়ে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তা রঞ্জন সেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা পোর্ট অথরিটির সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে আন্তর্জাতিক শিপিং আইন অনুযায়ী জাহাজ সংস্কার বা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তারা নাবিকদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দেবে না। আমরা তাদের বলেছি এর মধ্যে আরও অনেক বিষয় আছে। জাহাজের বীমার অর্থ ক্লেইম করা, সেটাতে অনেক দিন সময় লেগে যেতে পারে। ততদিন তাদের কি হবে। এসব জানিয়ে তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। এ ব্যাপারে তারা এখন ইতিবাচক।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধগন্ডামারা ইউপিতেও নির্বাচন ১৫ জুন
পরবর্তী নিবন্ধসেই ওসমান-নাসির সাময়িক বরখাস্ত