বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (ওউঋ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) ১৯৯১ সালে ১৪ই নভেম্বরকে “বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে। মূলতঃ বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি একটি ক্যাম্পেইন যা ১৬০ টি দেশের মানুষকে সচেতন করার বিশ্বের সর্ববৃহৎ একটি সচেতনতামূলক প্রচারণা। বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪৩.৫% রোগ সনাক্তকরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশে ১০% মানুষের মৃত্যু হয় এই ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জটিলতায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি :
শনাক্ত করা না গেলে বা ডায়াবেটিস সঠিক নিয়মে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঝুঁকি বাড়ে। বিশ্বে প্রতি বৎসর ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যু হয় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে মৃত্যুর কারণ হিসেবে সপ্তম রোগ এই ডায়াবেটিস। অবাক করার মতো ব্যাপার প্রতি দুই জনের ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে একজন জানেইনা যে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর এটাই হচ্ছে ভয়ানক বিপদের কথা। এই রোগের জটিলতাগুলো রোগের প্রাথমিক ধাপ থেকেই শুরু হয়। ঝুঁকিসমূহ হলোঃ রোগীর গায়ের অনুভূতি কমে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে। যেক্ষেত্রে কাঁটা ছেঁড়া হলে সহজে শুকাতে চায় না। পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে পা কেটে পর্যন্ত ফেলতে হতে পারে। ওজন অতিরিক্ত থাকলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। কায়িক শ্রম কম করলে বা সম্পৃক্ত চর্বির খাবার বেশি খেলে অথবা সুষম খাবার না খেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ডায়বেটিসের রোগীর অনেক বেশি। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনী জটিলতাও বাড়ে। ডায়াবেটিস বেশি থাকলে চোখের জটিলতাসহ রোগী অন্ধ হয়েও যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের চর্মরোগ এবং অন্য যেকোনো ধরণের রোগ থাকলে তা বেড়ে গিয়ে জটিল আকার ধারণ করে যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে।‘’
ডায়াবেটিস হলে করণীয় : ডায়াবেটিসের জনক ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্যার বলে গেছেন যে- ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ৩টা ‘উ’ এবং ২টা ‘ঊ’।
প্রথম D.-Dietবা খাদ্যব্যবস্থা ,
- Disciplineবা শৃঙ্খলা
D-Drugবা ঔষধ
E-Exercise বা ব্যায়াম
E- Education বা শিক্ষা।
প্রথম চিকিৎসা যেহেতু ডায়েট বা খাদ্যব্যবস্থা, আর আমিও পুষ্টিবিদ তাই খাবার নিয়েই বলতে চাই। ডায়বেটিক রোগীকে অবশ্যই ৫ বেলা খাবার খেতেই হবে। প্রতিবেলার খাবার খেতেই হবে সময়মতো এবং পরিমাণমতো। ময়দা না খেয়ে আটার তৈরী খাবার খেলে ডায়াবেটিস ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। আঁশ জাতীয় খাবার বাড়াতে হবে। কাঁচা এবং টাটকা বিশেষ করে মৌসুমী ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরী করতে হবে। সাপ্তাহে ৩ দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সপ্তাহে ৫ দিন ১৫০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। দেহের ওজন আদর্শ ওজনে রাখতে হবে।
বন্ধ করতে হবে : অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, ফাস্টফুড যা ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার প্যাকেটজাত, বেকারী খাদ্য, কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে। একটানা লম্বা সময় বসে থাকা যাবে না। ধুমপান বাদ দিতে হবে। চিনি-গুড়-মধু বাদ দিতে হবে।
কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতায় যা করণীয় : প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যক্তিকে দিনে ৮-১২ ঘন্টা বা তারও বেশি কাজের তাগিদে কর্মস্থলে থাকতে হয়। আর এই সময়টা যদি কাজবান্ধব বা পরিবেশটা যদি সহনীয় না হয়, তবে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে পরিপূর্ণ কাজের সুফল পাওয়া যাবে না। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ জনের মধ্যে ১ জন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ কর্মজীবী মানুষের অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস সারাজীবনের রোগ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ যোগ্য রোগ। নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম ধাপ যেহেতু খাদ্য পরিকল্পনা বা ব্যালেন্স ডায়েট মানা। সেটার ওপরে প্রথমেই সচেতন হতে হবে। সারাদিনের খাবারকে ৫-৬ বারে ভাগ করে খেতে হবে। ৪ ঘন্টায় বেশি খালি পেটে থাকা যাবে না। ২ ঘন্টায় বেশি চেয়ারে বসে থাকা যাবে না। স্ট্রেসমুক্ত থাকার জন্য যার যা ভালো লাগে অর্থাৎ কিছু বিনোদনমূলক কাজে জড়িত থাকুন। যেমনঃ গান শোনা, সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সাথে গল্প করা, বেড়াতে যাওয়া। অনেক উচ্চবাচ্য না করা, এমনি কাজে জড়িত থাকুন। ব্যায়ামের বা হাঁটার কোনো বিকল্প নাই। সারাদিনে ৩০ মিনিট হলেও হাঁটুন। এই ব্যাপারটি আপনি নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দাঁড়িয়েও করতে পারেন। আসুন ডায়াবেটিসকে জানি এবং নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা এখনই নেই। লেখক: বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ











