চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসা চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে সব হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো–সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল আহাদ গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের দাবির মুখে সরকারের ‘দৃশ্যমান পদক্ষেপ’ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব হাসপাতালে আগের মত পুরোদমে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার রাতে তিন দফায় হামলা ও মারধরের ঘটনায় রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অন্য চিকিৎসকরাও তাদের কর্মবিরতিতে সংহতি জানান। রোববার সকাল থেকে হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেও কর্মবিরতির ডাক দেন চিকিৎসকেরা। কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার আগে গতকাল বিকাল ৫টায় চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা চারটি দাবি নিয়ে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলন করে পুরোদমে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আব্দুল আহাদ বলেন, প্রথম দুটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলাকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন হয়নি, সেসব স্থানে দ্রুত বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই এ দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হবে। স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ আরও নিরাপদ হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ দাবি অনুযায়ী স্বাস্থ্য পুলিশ গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের বিষায় দীর্ঘ ও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এসব দাবির বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। এজন্য একটি কার্যকর কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল থাকবে। এছাড়া, স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন অসঙ্গতি যেমন ক্যাডার বৈষম্য ও রেফারেল সিস্টেমের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আহাদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। সিনিয়র স্বাস্থ্য সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ নিয়ে আগের খসড়ার আলোকে আরও তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় চেয়েছে। এই সময়ের ভেতরে পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়ায় যে অসংগতিগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করবেন এবং আরেকটি খসড়া ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করবেন। চিকিৎসক সমাজ আলোচনা–পর্যালোচনা করে সেই খসড়ার উপরে কোনো সংশোধনী থাকলে তাদের পক্ষ থেকে মতামত দেবেন। তারপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ এগিয়ে নেওয়া হবে পাশ করানোর জন্য।