কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি

| রবিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাইসেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের শুরুতে বেকার মানুষ কম থাকলেও বছরের শেষে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়েছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার আছেন। ২০২৩ সালের একই সময়ে গড় বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সামপ্রতিক এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩২২ সাল পর্যন্ত এক দশকে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে গড়ে দেড় শতাংশ হারে। যদিও একই সময়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বেকারত্বও বড় ধরনের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতির জন্য। মূলত অর্থনীতির প্রতিটি খাত এভাবে চক্রকারে একে অন্যকে প্রভাবিত করে। তাই একটা সমস্যার সমাধান ছাড়া অন্য সংকট থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়ে। বেকারত্ব দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে বিনিয়োগ আবশ্যক।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গত ১৫২০ বছরে আমাদের অর্থনীতির যে পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে সেই তুলনায় আমাদের কর্মসংস্থান বাড়েনি। কর্মসংস্থান তৈরি করতে গেলে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং বিনিয়োগ লাগবে। কৃষি বরং সেচুরেটেড, কৃষি থেকে আমরা বের করতে চাচ্ছি। তাহলে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে অগ্রগতি না হলে অগ্রগতি হবে না। পোশাক শিল্পে গত দশ বছরে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান খুব একটা হয়নি। অধিকাংশ শিল্পকলকারখানা ম্যাকানাইজড সিস্টেমে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ শ্রম প্রবৃদ্ধি ততটা হয়নি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের একদুই শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ গত দশ বছরে আমার আউটপুট বেড়েছে শতভাগ। কিন্তু কর্মসংস্থান সেই তুলনায় হয়নি, এটাই হলো কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির উদহারণ। আমাদের অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে সে তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি আসছে না। এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতিতে বিনিয়োগ আনা। বিনিয়োগ শুধু বাইরে থেকেই নয়, ভেতর থেকেও আসতে হবে। যাতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধি বাড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হচ্ছেযথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান বাড়ানো। আর এ জন্য প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ। বিনিয়োগের মাধ্যমে যেমন ব্যবসা ও শিল্প গড়ে ওঠে, তেমনি কাজের সুযোগও তৈরি হয়। তাতে মানুষের ভোগ বাড়ে, গতি আসে অর্থনীতিতে। তাই কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিক বাণিজ্যব্যবস্থাকে উৎসাহ দিতে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে অনেক কম হারে। গত আট বছরে স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এর বিপরীতে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ১১ শতাংশ। গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষ থেকে ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে সংস্থার গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, শিল্প খাতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। কারণ সামপ্রতিক আট বছরে মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হলেও এ খাতে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা বছরে গড়ে ১ শতাংশ করে কমেছে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সামষ্টিকঅর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। এ জন্য অর্থনীতির প্রধান তিন খাতে চাহিদামতো কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার ও ব্যক্তি খাতকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে অটোমেশন, ডিজিটাইজেশন এবং সর্বোপরি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। শিল্পের বিকাশ এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে