সীতাকুণ্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থ্থাপনা পরিচালককে অপসারণের দাবিতে গত তিনদিন ধরে কারখানার শ্রমিক–কর্মচারীরা কাজ কর্ম বন্ধ রেখে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। গতকাল বুধবারও বিক্ষুব্ধ শ্রমিক–কর্মচারীরা ‘দুর্নীতিবাজ এমডি নিপাত যাক, প্রগতি রক্ষা পাক’ সহ নানা ধরনের প্রতিবাদ মুখর স্লোগান দেন এবং এমডির কুশপুত্তলিকা দাহসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এর ফলে শ্রমিক–কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে প্রগতির কারখানার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অনেক সুনাম ছিল অতীতে। এক সময় দেশের প্রায় সব বিলাসবহুল বাস সংযোজিত হতো এ প্রতিষ্ঠানে। দূরপাল্লার বাস বলতেই ছিল ‘প্রগতির বাস’। আরও ছোট–বড় নানা আকৃতির গাড়ি সংযোজিত হতো এ প্রতিষ্ঠানে। তবে প্রতিষ্ঠানটির সেই সুনাম আজ আর শোনা যায় না। এটি এখন পরিণত হয়েছে লোকসান প্রতিষ্ঠানে।
সিবিএ নেতাদের অভিযোগ, প্রগতির এমডির উস্কানিতে সিবিএর বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে, স্থগিতাদেশ হয়েছে, এই সিবিএ টিকবে না, নির্বাচন বৈধ হয় নাই, আবার নির্বাচন করে সিবিএর কমিটি গঠন করতে হবে ইত্যাদি আগাম অযাচিত কথাবার্তা বলে শ্রমিক কর্মচারীদেরকে তিনি বিভ্রান্ত করেছেন এবং পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। সিবিএর বিরোধী পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য যা যা করার দরকার তিনি তার চেয়েও বেশি কাজ করছেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিবিএ নেতৃবৃন্দকে এড়িয়ে চলছেন এবং প্রতিপক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। সিবিএর কোন ন্যায্য দাবি দাওয়া তিনি মানছেন না। সিবিএর সমর্থিত শ্রমিকদের বিনা কারণে কারখানা হতে অন্যত্র বদলি করার হুমকি দিচ্ছেন। এ সমস্ত কারণে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তাই তার অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।
সিবিএ সভাপতি মো. শাহিজুল আলম নিপ্পন বলেন, সরকারি চাকরি পাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগ্যতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট পদে প্রার্থীকে সে পদে আবেদন করতে হবে। কিন্তু অভিযুক্ত তৌহিদুজ্জামান কোন ধরনের আবেদন ছাড়াই রাজনৈতিক লোকজনকে ব্যবহার করে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরি আদায় করেছেন। এ এমডিকে অপসারণ করা না হলে আরো বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সিবিএ সাধারণ সম্পাদক প্রেমনাথ দাশ বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুজ্জামানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। নিয়োগে, টেন্ডার ছাড়া মালামাল কেনা, অনুমোদন বিহীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া, প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ ব্যয় ও সরকারি তেল ব্যবহারে অনিয়মসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কাজে সে অনিয়ম করছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে এসব অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুজ্জামান বলেন, এ আন্দোলনের কোন ভিত্তি নেই। এটি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। আমার নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রগতি টাওয়ার নির্মাণ, জ্বালানি তেলের ব্যবহার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা আমার কাছে অনৈতিক সুবিধা পাননি, তারা আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে আন্দোলনের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে পিবিআই, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসইসি এবং দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করেছে। এসব বিষয়ে তারা কোন সত্যতা পায়নি।