আমরা মানুষ বড়ই অদ্ভুত ও বিচিত্র। যাকে বলে সুবিধাবাদী। একজন সৎ, সরল, সাহসী এবং মানবিক মানুষের কতটাই বা মূল্য এই সমাজে? সমাজ মানুষের স্ট্যাটাস যতটা খুঁজে মানবিক মূল্যায়ন একেবারে না। তার উপর কাজ ও শ্রমের মূল্যায়নও আমরা এখনো সঠিকভাবে করতে জানি না। একজন মানুষের নামের আগে তার পদবী কতটা ভারী সেটা দিয়েই মানুষ এবং কাজের মূল্যায়ন করা হয়। তিনি কি শিল্পপতি, নাকি ডাক্তার, নাকি ইঞ্জিনিয়ার, নাকি উকিল-ম্যাজিস্ট্রেট এমন আরও অনেক ভারী পদবী দিয়ে বিচার করি মানুষটাকে। সারাদিন শ্রম দেয়ার পর দিনশেষে সেই পদবীর কাছে হার মানতে হয় একজন কর্মী হোক বা গৃহিণীকে। কারণ আমরাই তাদের মূল্যায়ন করি না। আবার চাকরি করেও যে মেয়েরা এই সমাজে যে যথাযথ মূল্যায়ন পায় তাও না। সংসার সামলানো নিয়ে তাদেরও হাজার কথা বলতে ছাড়ে না সমাজ। সব দোষ মায়ের কারণ সে বাচ্চাকে সময় দিতে পারে না চাকরির কারণে। আসলে আমরা চাই কি? দোষারোপ আর সমালোচনা আমাদের মুখ্য কাজ। আমরাই নিজেরাই তো নিজেদের মধ্যে এতটা বিভেদ তৈরি করে রেখেছি। সমাজের কাছে গৃহিণীরা দৈনিক ১৬/১৭ ঘন্টা শ্রম দেয়া একজন বেকার মাত্র।একটা পদবীর কাছে করুণভাবে হার মানতে হয় এক একজন গৃহিণীর। অনেক গৃহিণীর মনে হীনম্মন্যতা আর হাহাকার কাজ করে। কারণ সে পদবীযুক্ত কাজ করতে পারছে না। কিন্তু সে ঠিকই কাজ করছে, যেটাকে আমরা মূল্যায়ন করছি না। আবার সেই গৃহিণীর কাজে একটু কমতি দেখা গেলে তার বদনামেরও শেষ নেই। আমরাই নিজের প্রয়োজনে কাউকে মাথার টুপি করি আবার আমরাই তাকে স্বার্থ শেষে পায়ের জুতো বানাতে এক মিনিটও ভাবি না। ক্ষমতার কাছে প্রতিনিয়ত মাথা নত করে থাকাটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরাই মানবিক বোধকে পায়ের তলায় নিষ্পেষিত করছি। কারণ আমরা মানুষ কিংবা কর্মকে নয় তার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করি।