কর্নেল আবু তাহের: মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী

| রবিবার , ২১ জুলাই, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

কর্নেল আবু তাহের (১৯৩৮১৯৭৬)। সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, বিপ্লবী সংগঠক। তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট এম সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ এবং ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এম.এ প্রথম পর্বে অধ্যয়ন করেন। আবু তাহের ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে (কম্যান্ডো বাহিনী) বদলি করা হয়। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের পাকভারত যুদ্ধে প্রথমে কাশ্মীর ও পরে শ্যিয়ালকোট রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য তিনি খেতাব লাভ করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি আমেরিকার ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিংএ গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং উচ্চতর সমরবিদ্যা্যয় অনার্স গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে সিনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে স্টাফ কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত হন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর কামালপুর শত্রু ঘাটিতে আক্রমণ পরিচালনাকালে তিনি আহত হন। ভারতে চিকিৎসা শেষে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আবু তাহেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ঐ বছর জুন মাসে তিনি ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ও কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। কর্নেল তাহের ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের কারণে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হ্যয়। এ প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর (১৯৭৫) আবু তাহের জাতী্যয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহযোগিতায় সিপাহিজনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহের গ্রেফতার হন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় কারাগারের অভ্যন্তরে তাহেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার হ্যয় এবং বিচারে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হ্যয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীরউত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধদোহারে লোডশেডিং এর সমাধান চাই