কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার যানজট নিরসনে দুই পাশে আরো দুটি লেইন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। বর্তমানে টোল প্লাজা এলাকায় দুই পাশে ৪টি করে ৮টি বুথ রয়েছে। তারপরও প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দুটি লেইন বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করেছে সওজ চট্টগ্রাম অঞ্চল। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে এখন ওয়ার্ক অর্ডার পর্যায়ে আছে। আগামী জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সওজ চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। সওজ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, শাহ আমানত সেতু থেকে কঙবাজারের দিকে যেতে টোল প্লাজা এলাকায় মোট ৮টি বুথ (সেতু থেকে নেমে কঙবাজারের দিকে যেতে ৪টি বুথ এবং চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে ৪টি বুথ) দিয়ে টোল আদায় করা হয়। নতুন করে দুই পাশে দুটি বুথ বাড়লে তখন উভয় পাশে বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি। এখন যে যানজট দেখা যায় তখন সেটি আর থাকবে না বলে মনে করছেন সওজের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় যানজট নিরসনে বিদ্যমান টোল প্লাজার দুই পাশে আরো দুটি লেইন বাড়ানো হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন ওয়ার্ক অর্ডার পর্যায়ে আছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারিতে কাজ শুরু হবে।
এদিকে টোল প্লাজা এলাকায় যানজটের জন্য বশিরুজ্জামান চত্বরকে ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গাড়ির স্টেশন এবং মইজ্জ্যারটেক এলাকায় একইভাবে গড়ে ওঠা গাড়ির স্টেশনকে দায়ী করেছেন সওজ চট্টগ্রামের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিজাম। তিনি বলেন, টোল প্লাজার পর বশিরুজ্জামান চত্বর এলাকায় রাস্তা দখল করে শত শত সিএনজি টেঙি, জিপসহ অন্যান্য গাড়ির স্টেশন গড়ে উঠেছে। মইজ্জ্যারটেক এলাকায়ও রাস্তার পাশে গাড়ির স্টেশন গড়ে উঠেছে। ওখান থেকে গাড়ির যানজট শুরু হয়। ওটার প্রভাব এসে পড়ে টোল প্লাজায়। ওটার কারণে মাঝেমধ্যে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তাই টোল প্লাজা এলাকায় দুপাশে আরো দুটি লেইন বাড়ানো হচ্ছে।
শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ–ভারত যৌথ কোম্পানি সেল–ভ্যান জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ বলেন, শাহ আমানত সেতু দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২৭ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার কিছুটা বাড়ে। যদিও ৮টি লেন দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু ছুটির দিনে চাপ বেড়ে যায়। তখন যানজট সৃষ্টি হয়। আমরা বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বলেছি। তারা দুই পাশে আরো দুটি লেইন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দুটি লেইন বাড়লে আরো দুটি বুথ বাড়বে। এখন উভয় পাশে ৪টি করে ৮টির স্থলে তখন ৫টি করে ১০টি বুথ হবে। তখন যানজট তেমন থাকবে না।
মইজ্জ্যারটেক এলাকার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার বলেন, এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যানজট নিয়ন্ত্রণ রাখতে। নতুন করে ট্রাফিক পুলিশ বঙ নির্মাণের কাজ চলছে। তবুও গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
শাহ আমানত সেতু থেকে টোল প্লাজা হয়ে মইজ্জ্যারটক এলাকা পর্যন্ত যানজটের কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মাসের পর মাস। যাত্রী থেকে ব্যবসায়ী সবার অভিযোগ, টোল আদায়ে ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
তবে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। সেল–ভ্যান জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ বলেন, টেঙির আধিক্য, চালকদের শৃঙ্খলা না মানা, অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে সপ্তাহে তিন দিন যানজট দেখা দেয়। অনেক গাড়ির নম্বর প্লেট ঢেকে রাখা হয়। বিভিন্ন পরিচয়ে টোল দিতে না চাওয়া, চালকদের বড় নোট দেওয়া, ছোট গাড়ি বেশি, সন্ধ্যা হলে কারখানার ছুটি তো আছেই। এছাড়া বন্ধের দিনে যানজট হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন কঙবাজার, বান্দরবান, পারকি সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ, বিয়ে ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠান।
স্থানীয়রা বলছেন, টোল প্লাজায় যানজট কমাতে অন্তত আরো চারটি লেন বাড়ানো দরকার। সেই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।