কর্ণফুলী রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে বন্দরকেই

তাদের তহবিলের একটি অংশ নদী ও নগর উন্নয়নে বরাদ্দ হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম।। মহানগর আওয়ামী লীগের সাম্পান র‌্যালি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

অব্যাহত দখল ও দূষণের হাত থেকে কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে মাঝিদের সাথে নিয়ে সাম্পান র‌্যালি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কর্ণফুলীসহ সকল নদ-নদীর দখল, দূষণ প্রতিরোধে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী এই র‌্যালির আয়োজন করেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে কর্মসূচির প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত সাম্পান র‌্যালি অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে আবার অভয়মিত্র ঘাটে ফিরে আসে। র‌্যালিতে সুসজ্জিত ১০০টি সাম্পান অংশ নেয়। এসময় নদীর তীরে সমবেত হাজার হাজার মানুষ হাততালি দিয়ে র‌্যালিকে স্বাগত জানান।
সাম্পান র‌্যালির উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
র‌্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারে দিন দিন নদীগুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, কর্ণফুলীতেই চট্টগ্রাম বন্দর। দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো বিকল্প বন্দর নেই। দখল-দূষণে কর্ণফুলী যদি গতিপথ হারায় তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কর্ণফুলী রক্ষায় সকল আয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরকেই করতে হবে। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের খেয়ালখুশি মতো নদীর তীর ও নদী লিজ দিয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কর্ণফুলীতে ড্রেজিং এবং পাড় দখলমুক্ত করেনি।
সাম্পান র‌্যালির পূর্বে কর্ণফুলীতে বড় জলপরিবহনের উপর স্থাপিত সভামঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে না। চট্টগ্রাম বন্দর না বাঁচলে বাংলাদেশের বেঁচে থাকার কোনো অর্থ হয় না। তাই কর্ণফুলীকে বাঁচানো শুধু চট্টগ্রামবাসী নয়, রাষ্ট্র, সরকার ও দেশের ১৮ কোটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। কর্ণফুলী নদী ও বুড়িগঙ্গা নদীসহ দেশের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার শতভাগ বাস্তবায়ন চাই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, লুসাই পর্বতই কর্ণফুলী নদীর উৎস। সেখান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই কর্ণফুলী নদীর তীরেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বন্দর গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০০ বছর আগে। এই বন্দর জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। অথচ যেই নদীটির তীরে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে উঠেছে তাকে চেতন বা অবচেতন মনে প্রতিদিন হত্যা করে চলেছি। তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক ও পলিথিন আগ্রাসনে এবং নানা ধরনের অপচনশীল বর্জ্যে কর্ণফুলী নদীর প্রায় ২০ ফিট গভীরতা কমে গেছে। ২০ ফিটের এই পলেস্তারের কারণেই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী প্রায় ৮০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অন্তত ৩০০টিরও বেশি কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই শিল্প ও কলকারখানাগুলোর দূষিত তরল বর্জ্য এই নদীতেই ফেলা হচ্ছে। তাই এই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মৎস বিচরণের পরিবেশ নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ সিস্টেম কর্ণফুলী নদীমুখী হবে কেন? আরো একটি প্রশ্ন কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রামে খাল, নালা, নর্দমা থেকে পানি নদীতে যেতে পারলেও এই নদীর ধারণ ক্ষমতা নেই কেন? তাই জোয়ারের পানিসহ বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। তিনি আরো বলেন, এই কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে চট্টগ্রাম বন্দর। তাদের বার্ষিক আয় ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তাদের তহবিল থেকে একটি ন্যূনতম অংশ যদি কর্ণফুলী রক্ষায় ও চট্টগ্রাম উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয় তাহলে কর্ণফুলী বাঁচবে এবং চট্টগ্রাম নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে। তিনি আরো বলেন, কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয় জাতীয় অথনৈতিক প্রাণপ্রবাহ। কর্ণফুলী বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। কর্ণফুলীর নদীতে যাতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে, নদী ভরাট করে নদী দখল না হয় এবং আমরা কেউ যেন সামান্য পরিমাণও কর্ণফুলী নদীকে দূষিত না করি তাহলে কর্ণফুলী নদী রক্ষা উদ্যোগ অনেকাংশে সফল হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত সাম্পান র‌্যালি পূর্ব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সফর আলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ত্রাণ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, হাজী বেলাল আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্ণফুলী ও হালদা নদী গবেষক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, মাঝি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জাফর আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকিচেনে খোলা ডাস্টবিন স্যুপে তেলাপোকা