কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিল গত ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এই ৬ মাসে কারখানাটিতে কোনও কাগজ উৎপাদন হয়নি। কর্ণফুলী পেপার মিল এলাকায় নতুন ৫টি কারখানা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই প্রেক্ষিতে কার্যক্রম চলছে। তবে চন্দ্রঘোনায় কি ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে এবং কবে নাগাদ নতুন কারখানা বসানোর কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। কেপিএমের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গত ৭ জুলাই থেকে কেপিএমের উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছিল। ঈদের পর পুনরায় কারখানা চালু করা হবে এমন সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের ছিল। কিন্তু গত ৯ জুলাই পবিত্র ঈদ উল আযহা অনুষ্ঠিত হবার পর এ পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আর কেপিএম কারখানা উৎপাদনের জন্য চালু করা হয়নি।
কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী স্বপন কুমার সরকার জানান, কেপিএমের বয়স প্রায় ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে। বয়সের ভারে কেপিএমের কলকব্জা এবং ভবনগুলো প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় সময় কারখানায় উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটতো। এরই মাঝে কারখানা থেকে বিপুল সংখ্যক দক্ষ শ্রমিক কর্মচারী এবং প্রকৌশলী বয়সের কারণে নিয়ম অনুযায়ী চাকরি থেকে অবসর নেন। অনেকে অন্য কারখানায় বদলি হন। এমন পরিস্থিতিতেও এতদিন কেপিএম চালু রেখে সীমিত উৎপাদনে ছিল কারখানাটি। কিন্তু বিগত প্রায় ৬ মাস বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে কেপিএম চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে এখানে নতুন ৫টি কারখানা চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) পরিকল্পনা রয়েছে।
এরই আলোকে গত ২৫ নভেম্বর বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ্ মো. ইমদাদুল
হক কেপিএম পরিদর্শন করে গেছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর বিসিআইসির পরিচালক (উৎপাদন ও গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম কেপিএম কারখানা পরিদর্র্শনে আসেন। নতুন কারখানা বসানোর জন্য গত তিন মাস ধরে একটি পর্যবেক্ষক টিম চন্দ্রঘোনায় অবস্থান করে সমীক্ষা চালাচ্ছে। নতুন কারখানা বসানোর পূর্বে বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কেপিএম পরিদর্শনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রীর পরিদর্শনের পর নতুন কারখানা করার বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেপিএমের হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটি বন্ধ থাকলেও শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টদের বেতনভাতা নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করা হচ্ছে। যেসব শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা অবসরে যাচ্ছেন তাদের যাবতীয় বেতনভাতা বিসিআইসি প্রদান করছে। কেপিএমের শ্রমিক নেতা আব্দুল রাজ্জাক এবং আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, কেপিএম বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন কারখানা। এখানে কোনো একসময় ৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এখন কারখানাটিতে শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তার সংখ্যা সাড়ে তিনশ’র চেয়েও কম হবে। জরাজীর্ণ হবার কারণে কারখানাটি আপাতত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন কারখানা চালু করার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক। আমরা আশা করছি শিল্পমন্ত্রী মহোদয় কেপিএম পরিদর্শন করার পরই চন্দ্রঘোনায় নতুন কারখানা গড়ে তোলার বিষয়ে সঠিক দিনক্ষণ জানা যাবে।